প্রজন্মের ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে ব্রিটেন, ফলাফল অনিশ্চিত

গত পাঁচ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্যে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়া সাধারণ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ ও ২০১৭ সালে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর এবারে গত প্রায় একশো বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ডিসেম্বর মাসে ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছেন দেশটির ভোটাররা। যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ভোটারদের জন্য বৃহস্পতিবার গ্রীনিচ মান সময় সকাল সাতটায় ভোট কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। গ্রিনিচ মান সময় রাত দশটায় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোর চারটা) ভোটকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরপরই শুরু হবে গণনা। আশা করা হচ্ছে শুক্রবার ভোর থেকেই বেশিরভাগ ফলাফল ঘোষণা করা শুরু হবে। দেশটির সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান এই নির্বাচনকে প্রজন্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়েছে।ভোটকেন্দ্রের সামনে ব্রিটেনের ভোটারদের লম্বা লাইন

২০১৫ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে থেরেসা মে’র নেতৃত্বে যুক্তরাজ্যের সরকার গঠন করে কনজারভেটিভ পার্টি। পরের বছর এক গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার (ব্রেক্সিট) পক্ষে রায় দেয় দেশটির নাগরিকেরা। ওই গণভোটের রায় বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেশটির পার্লামেন্টে অচলাবস্থা তৈরি হয়। ২০১৭ সালে আরেক নির্বাচনেও জয়ী হয়েও ব্রেক্সিট সুরাহা করতে পারেননি থেরেসা মে। পরে এ বছরের জুনে তিনি পদত্যাগ করার পর বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েও অচলাবস্থা নিরসনে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে তৃতীয়বারের মতো সাধারণ নির্বাচনের ভোট দিচ্ছেন দেশটির নাগরিকেরা।

বৃহস্পতিবারের সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিয়ে মোট ৬৫০ জন আইনপ্রণেতাকে নির্বাচিত করবেন ভোটারেরা। প্রতিটি আসনে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রার্থীই ওই আসনের আইনপ্রণেতা নির্বাচিত হবেন। ২০১৭ সালের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে প্রথম আসন হিসেবে নিউক্যাসেল সেন্ট্রাল আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

ব্রিটেনে সাধারণত প্রতি চার বা পাঁচ বছর পর পর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে গত অক্টোবরে দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এই নির্বাচন অনুষ্ঠানে সম্মতি দেয় দেশটির আইনপ্রণেতারা। ১৯৭৪ সালের পর প্রথমবারের মতো এবারে দেশটিতে শীতকালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর ১৯২৩ সালের পর প্রথমবার ডিসেম্বরে নির্বাচন হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের বেশি যে কোনও ব্রিটিশ নাগরিক ভোট দিতে পারেন। কমনওয়েলথ ও আয়ারল্যান্ডের যোগ্য বিবেচিত নাগরিকরাও ভোট দিতে পারবেন। গত ২৬ নভেম্বর শেষ হয়েছে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম। ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ৬৫০টি আসনের ৪০ হাজার কেন্দ্রে চলবে ভোটগ্রহণ।

ভোট দিতে হলে ভোটারদের ভোটারকার্ডের দরকার পড়ছে না। তবে ভোট কেন্দ্রে নিজেদের নাম ও ঠিকানা জানাতে হচ্ছে। একজন ভোটার একটি মাত্র ব্যালট পাবেন। আর তাতে একজন প্রার্থীকেই ভোট দিতে পারছেন। একাধিক প্রার্থীকে ভোট দেওয়া হলে ব্যালট বাতিল হয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা বরিস জনসসন সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি ভোট কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। ওই সময় নিজের কুকুর ডিলানকে সঙ্গে নেন তিনি। আর প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন উত্তর লন্ডনে ভোট দিয়েছেন।

স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (এসএনপি) নেতা নিকোলা স্ট্রাজিওন গ্লাসগো’র একটি কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক (লিবডেম) পার্টির নেতা জো স্নুইনসন পূর্ব ডানবার্টনশায়ারের একটি কেন্দ্রে ভোট দেন। ওই সময় তার সঙ্গে ছিলেন তার স্বামী ডানকান হেমস। ব্রেক্সিট পার্টির নেতা নাইজেল ফ্যারাজ পোস্টাল ভোট ব্যবহার করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই কেন্দ্রের অভ্যন্তরে সেলফি বা অন্য কোনও ধরণের ছবি তোলার বিষয়ে  ভোটারদের সতর্ক করে দেয় নির্বাচন পর্যবেক্ষকেরা। এ ধরণের ছবি তুললে আইনের লঙ্ঘন হতে পারে সতর্ক করা হয়েছে।

এদিকে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সর্বশেষ জরিপ প্রকাশ করেছে লন্ডন ইভনিং স্টান্ডার্ড। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই জরিপে বিরোধী দল লেবার পার্টির চেয়ে ১১ পয়েন্টে এগিয়ে আছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি। তবে ওই জরিপে অংশ নেওয়া প্রতি চার জনের একজনই শেষ মুহূর্তে মনোভাব পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে। এছাড়া ২০১৫ ও ২০১৭ সালেও নির্বাচনি জরিপ ভুল প্রমাণ করেছিলেন দেশটির ভোটাররা। ফলে এবারের নির্বাচণের ফলাফলও থেকে গেছে অনিশ্চিত।