আজীবন ক্ষমতায় থাকার প্রশ্নে যা বললেন পুতিন

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেছেন, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কালে চর্চিত আমৃত্যু ক্ষমতায় থাকার ধারায় রাশিয়াকে ফিরিয়ে নিতে চান না তিনি। শনিবার রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গ শহরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রবীণদের নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আলোচনা জন্ম দেওয়ার কয়েকদিন পর পুতিন এমন মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তাকে ঘিরে চলা জল্পনার অবসান ঘটাতে চাইছেন।

noname

বুধবার বার্ষিক ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়নের’ ভাষণে পুতিন গণভোটের মাধ্যমে সংবিধানে বড় ধরনের সংশোধনী আনার প্রস্তাব দেন। পুতিনের সংশোধনী প্রস্তাবে রুশ প্রেসিডেন্টদের টানা দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকার নিয়মে পরিবর্তন আনার কথাও বলা হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, এ দফায় মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এখনকার সংবিধান অনুযায়ী পুতিন আর প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। তারা মনে করছেন, সংবিধান সংশোধন করে রুশ প্রেসিডেন্ট আজীবন ক্ষমতায় থাকার পট প্রস্তুত করতে চাইছেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লেনিনগ্রাদের অবরোধ ভেঙ্গে সোভিয়েত বাহিনীর বেরিয়ে আসার ৭৭তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এক যুদ্ধ-অভিজ্ঞ প্রবীণ পুতিনের কাছে রুশ প্রেসিডেন্টের টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার নিয়ম বিলোপের বিষয়ে জানতে চান। জবাবে পুতিন বলেন, ‘গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে রাষ্ট্রনেতারা যখন দিন ফুরোনোর আগ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলো নিশ্চিত না করেই দায়িত্ব ছেড়েছেন- সেরকম অবস্থায় ফেরাটা খুবই উদ্বেগের হবে। আমার মনে হয় ওই ধরনের পরিস্থিতিতে না যাওয়াই ভালো হবে’।

সোভিয়েত আমলের গুপ্তচর সংস্থা কেজিবি-র সাবেক কর্মকর্তা পুতিন গত দুই দশক ধরে হয় প্রেসিডেন্ট নয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাশিয়ার রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন।  ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়নের’ ভাষণে দেওয়া প্রস্তাবে তিনি প্রেসিডেন্টকেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থার বাইরে নতুন কেন্দ্র সৃষ্টির লক্ষ্যের কথা বলেছেন। অনেকেই এ পদক্ষেপকে ২০২৪ সালে মেয়াদ শেষের পর ৬৭ বছর বয়সী প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার অপচেষ্টা হিসেবেই দেখছেন। প্রেসিডেন্টের অনেক ক্ষমতা পার্লামেন্টের কাছে হস্তান্তরের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন পুতিন। রুশ প্রেসিডেন্টের ওই প্রস্তাবের পরপরই প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদভ তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে পদত্যাগ করেন।

সবাইকে চমকে দিয়ে পুতিন পরে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মিখাইল মিশুস্তিনকে বেছে নেন। এর আগে রাশিয়ার কর বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন মিশুস্তিন।

উল্লেখ্য, সোভিয়েত আমলের শেষদিকে লিওনিদ ব্রেজনেভ, ইউরি আন্দ্রেপোভ ও কনস্টানটিন চেরনেঙ্কোর মতো বয়োজ্যেষ্ঠ নেতারা দায়িত্বে থাকা অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করেছেন; তাদের মৃত্যুর পর ক্ষমতা দখল নিয়ে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিলো।