এই অশান্ত সময়ে বাংলা অসাধারণভাবে পথ দেখাচ্ছে: নন্দিতা দাস

‘এ দেশ বহুত্বের। এখানে কখনোই একমাত্রিক কিছু হতে পারে না। এ কথা নতুন নয়। তবে বারবার বলতে হয়, এটাই যা চিন্তার ও দুঃখের। কোনও এক ধারার ভাবনা দিয়ে এ দেশকে বর্ণনা করা যায় নাকি? অনেক ধর্মের স্বর থাকবে, সবার জায়গা থাকবে, এমনই তো কথা ছিল।’ বৃহস্পতিবার ১৩তম জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভালের প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে এমনটাই বললেন চলচ্চিত্র পরিচালক-অভিনেতা নন্দিতা দাস। তার ভাষায়, ‘আজ মান্টো থাকলে বলতেন, ৭০ বছরেও কিছুই শিখলে না!’noname
এনআরসি-ভাবনা ঘিরে ভারতের উত্তাল পরিস্থিতি নিয়ে চর্চা চলছে গোটা দুনিয়ায়। দেশটি কতটা গণতন্ত্রিক, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে বারবার। এমন সময়ে এসব ‘লজ্জার কথা’ বলতে আপত্তি নেই নন্দিতার। কারণ, আপাতত তিনি গর্বিত জনগণকে নিয়ে। আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘যে দেশে এনআরসি-র চোখ রাঙানি হয়, সে দেশে শাহিনবাগও দেখা যায়। এটাই আমাদের পাওয়া।’

নিজের কাজের জগতের অনেকেই যে নেই তার মতো ভাবনার মানুষের পাশে? বলিউডের অনেকেই যে উল্টো কথা বলছেন, খারাপ লাগছে না তার? মন খারাপ যে হয়নি আগে; তা নয়। বিভাজন তো চোখে পড়েছে আগে। তবে এখন সেসব খারাপ লাগা মনে রাখতে চান না তিনি। কেন? ‘কারণ, একসঙ্গে এত অভিনেতাকে বহু দিন কথা বলতে শুনিনি। এমন উত্তাল সময়ে কে এলো না পাশে তা না দেখে, কে কে এলো,সেটাই তো দেখার।’ মনে করিয়ে দেন মান্টো-র পরিচালক।

বাঙালি সাংবাদিক দেখে আরও একটু মন খুলে কথা বলতে ইচ্ছে করলো কি নন্দিতার? স্পষ্ট বাংলা উচ্চারণে বলেন, ‘এলাকাভিত্তিক বিভাজন একেবারেই মানি না। তবে বাংলা (পশ্চিমবঙ্গ) অসাধারণভাবে পথ দেখাচ্ছে এ সময়ে। ইতিহাসে বহু সময়েই বাঙালিদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে দেখা গেছে। আবার দেখে খুব ভালো লাগছে।’

কোনও সমস্যার সময় এখনও বাঙালি শিল্পী পরিচালকদের কথা মনে পড়ে তার। এমন সময় তাই আবার বিশেষ করে কলকাতার দিকে ফিরে তাকাতে ইচ্ছে করছে। এর থেকে নতুন ছবির রসদ খুঁজছেন কি তিনি?

সমস্যার সময়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করায় বিশ্বাসী নন নন্দিতা। তবে ভাবতে ভালো ল‌াগে যে, ‘মান্টো’ বানিয়েছেন তিনি। তা-ও কিছু দিন আগেই। বলেন, ‘যখন ছবির জগতে কাজ করতে শুরু করেছিলাম, তখন তো মান্টো বানানোর গুরুত্ব ততটা ছিল না। দেশভাগের ৭০ বছর পরে বানাতে হলো। বাধ্য হলাম।’ ততক্ষণে কথার পিঠে অনেক কথা হয়ে গেছে। পুবের বর্ডার, পশ্চিমের বর্ডারে অশান্তির চেহারা কিভাবে আলাদা ছিল দেশভাগের সময়ে, সেসব নিয়ে হয়েছে খানিক আলোচনা। অনেক দিন পর্যন্ত তাই মান্টোর কথা মনে করিয়ে লাভ হতো না বলে মনে হয় তার। কিন্তু তারপর যে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাবে, কে জানতো! আর এখন তো ‘মান্টো’র মতো আরও ছবি হলে ভালো হয় বলেই মনে হচ্ছে তার।

মান্টো-র মতো ছবি না হলেও, অনেক সাহিত্যিক উঠে আসছেন আবার নতুন করে। তারাই তো মান্টোদের ধারা বজায় রাখেন। কথা বলার সাহস জোগান। নন্দিতা তার মুখ চেয়ে আছেন। তাদের পাশে থেকেই কাজ করার স্বপ্ন দেখছেন। নতুন সময়ের অপেক্ষা করছেন। যত বার ধর্মের নামে, জাতের নামে বিভাজন ঘটবে, তত বার আরও অনেক অনেক মান্টো-র জন্ম হবে বলে মনে করেন নন্দিতা। মনে করিয়ে দেন, তেমনটাই তো এখন হচ্ছে গোটা দেশজুড়ে। নন্দিতা বলে চলেন, ‘আমার ভাবতেও উত্তেজনা হচ্ছে যে, শাহিনবাগে এখন একসঙ্গে কত জন মান্টো দাঁড়িয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করছেন! ভাবুন, আপনার কলকাতায় কত জন মান্টো একসঙ্গে কাজ করছেন। ভাবতে ভালো লাগে না?’ সূত্র: আনন্দবাজার।