লিবিয়ায় সর্বশক্তি দিয়ে হামলা চালাচ্ছে হাফতার বাহিনী : এরদোয়ান

লিবিয়ার আমিরাত সমর্থিত বিদ্রোহী নেতা খলিফা হাফতারের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। রবিবার আলজেরিয়া সফরের প্রাক্কালে এমন অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, লিবিয়ায় সর্বশক্তি দিয়ে হামলা চালাচ্ছে হাফতার বাহিনী। তবে তারা সফল হবে না।রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান
আমিরাত ছাড়াও হাফতার বাহিনীকে সমর্থন দিচ্ছে মিসর, রাশিয়া ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলো। এ বাহিনীর নাম দেওয়া হয়েছে লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি।

এরদোয়ান বলেন, হাফতার বাহিনী দফায় দফায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমর্থন তাকে ধ্বংসাত্মক ভূমিকায় নিয়ে এসেছে। আমাদের দেখতে হবে, হাফতারের পরিচয় কী? তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি এর আগেও তার ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এমন মানুষের কাছে যুদ্ধবিরতি চলাকালেও বোঝাপড়া আশা করা যায় না।

গত নয় মাস ধরে লিবিয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার ও হাফতার বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। সম্প্রতি তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যস্থতায় একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে দেশটির জাতিসংঘ সমর্থিত সরকার। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষর না করেই মস্কো ছাড়েন খলিফা হাফতার। এ ঘটনায় এরদোয়ান বলেছেন, খলিফা হাফতার ও তার বাহিনী যদি লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত রাখে, তাহলে তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দেবে আঙ্কারা। কেননা, লিবীয় স্বজনদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, লিবিয়ার সঙ্গে তুরস্কের ঐতিহাসিক ও সামাজিক সম্পর্ক রয়েছে। আঙ্কারা হস্তক্ষেপ না করলে হাফতার পুরো দেশটি দখল করে ফেলতো।

এর আগে জানুয়ারির গোড়ার দিকে ত্রিপোলিতে সেনা মোতায়েনের জন্য একটি প্রস্তাব পাস করে তুরস্কের পার্লামেন্ট। আমিরাত সমর্থিত হাফতার বাহিনীর হামলা মোকাবিলায় লিবিয়া সরকারের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত অনুরোধ পাওয়ার পর ওই প্রস্তাব পাস করে তুর্কি পার্লামেন্ট।

জীবনযাপনের মানের দিকে থেকে তেলসমৃদ্ধ লিবিয়া একসময় আফ্রিকার শীর্ষে ছিল। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ছিল পুরোপুরি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তবে যে রাজনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা ওই ঐশ্বর্য নিশ্চিত করেছিল, সেটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় ২০১১ সালে যখন পশ্চিমা সমর্থিত বিদ্রোহীদের হাতে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হয়। তারপর থেকে লিবিয়ায় চলছে সীমাহীন সংঘাত। গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হওয়ার পর ত্রিপোলিতে জাতিসংঘ সমর্থিত একটি মনোনীত সরকার রয়েছে। ওই কর্তৃপক্ষকে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার বা জিএনএ নামে অভিহিত করা হয়। তবে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হাতে রয়ে গেছে। পশ্চিমাঞ্চলে জিএনএ-এর কর্তৃত্ব থাকলেও পূর্ব ও দক্ষিণের বেশিরভাগ অঞ্চল হাফতার বাহিনী এলএনএ-এর দখলে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে এ বাহিনী লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

প্রায় পাঁচ বছর ধরে লিবিয়ায় দুটি সরকার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এদের মধ্যে একটি সরকারকে সমর্থন দিয়েছে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশ। আরেকটি ফিল্ড মার্শাল হাফতারের নেতৃত্বাধীন। ত্রিপোলির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে জাতিসংঘ। তুরস্ক, ইতালি ও যুক্তরাজ্য এ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। আর হাফতার বাহিনীর সমর্থনে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়া, ফ্রান্স, মিসর ও সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে (জিএনএ) সমর্থন করে এবং শান্তি আলোচনার আহ্বান জানায়। কিন্তু ২০১৯ সালের এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খলিফা হাফতারকে ফোন দিয়ে লিবিয়ার ব্যাপারে ‘যৌথ স্বপ্নের’ কথা বলেন। সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা।