করোনা ভাইরাস আতঙ্ক, চীনে ফেস মাস্কের ঘাটতি

করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় চীনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ক্রমবর্ধমান আতঙ্কের ফলে লোকজন ফেস মাস্ক ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছে। তবে ব্যাপক চাহিদার ফলে ইতোমধ্যেই দেশটিতে এর ঘাটতি দেখা দিয়েছে।noname
প্রতিবছর চীনা নববর্ষ উপলক্ষে প্রচুর মানুষ ছুটি কাটাতে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করবেন। তবে এবার প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আনন্দ উদযাপনে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। তারপরও ২৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া নববর্ষের ছুটি কাটাতে আগেভাগেই প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় অবকাশ কাটাতে যান বহু চীনা পর্যটক।

নিজ দেশে ফেস মাস্কের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় এটি সংগ্রহে দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর ভরসা করছেন চীনা পর্যটকরা। সিউলে ইতোমধ্যেই এর বিক্রি ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত বহু চীনা পর্যটক এটি মজুত করতে শুরু করে দিয়েছেন।

আল জাজিরা-র খবরে বলা হয়েছে, চান্দ্র নববর্ষের ছুটি কাটাতে দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকা কয়েক হাজার চীনা পর্যটক মাস্ক কিনতে দেশটির ফার্মেসিগুলোর বাইরে লাইন দিয়ে অপেক্ষা করছেন। সেখান থেকে তারা ব্যাগভর্তি মাস্ক কিনে রাখছেন। অনেকে ছুটি শেষে দেশে ফিরেও যেন ব্যবহার করা যায় সেজন্য প্রচুর পরিমাণে সংগ্রহ বা মজুত করে রাখছেন।

এদিকে ২৭ জানুয়ারি সোমবার পর্যন্ত চীনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রাণহানির এ সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ২৫ জনই হুবেই প্রদেশের।

এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ৭৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের বিরুদ্ধে প্রাণহানি ও আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে মাস্ক পরিচিত উহান শহরের একজন চিকিৎসাকর্মী জানিয়েছেন, দেশটিতে ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দল কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার তাগিদ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

চীনের উহান শহর থেকে উৎপত্তি হওয়া এ ভাইরাস ইতোমধ্যেই রাজধানী বেইজিংসহ চীনের ২৯টি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২০ বছরে চীন এবং বাকি বিশ্বের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট যোগাযোগ দ্রুত সম্প্রসারিত হয়েছে। উহানের এক কোটি ১০ লাখ বাসিন্দা এখন সরাসরি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গন্তব্যের পাশাপাশি বাড়ির কাছের সিউল, ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুরের মতো শহরে যেতে পারে। সে কারণেই ভাইরাসটি চীনের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, নেপাল, ফ্রান্স ও সৌদি আরবসহ অন্তত ১২টি দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, আক্রান্তরা সম্প্রতি চীন সফর করেছেন।

চীনে আক্রান্ত ও মৃতের বেশিরভাগ খবর মূলত হুবেই প্রদেশ থেকেই আসছে। তবে জাতীয় পর্যায়ে এ সংক্রান্ত বিশদ কোনও ডাটা প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ। অবশ্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এ ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশের উহান শহরে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উহানসহ মোট তিনটি শহরের প্রায় দুই কোটি মানুষকে শহর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিল্প ও পরিবহন কেন্দ্র হিসেবে জনপ্রিয় ও জমজমাট শহর উহানে এখন কার্যত সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। সূত্র : আল জাজিরা, রয়টার্স।