নারী সহকর্মীদের কমান্ডার হিসেবে চায় না ভারতীয় সেনারা

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নারী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বদানকারী পদ দেওয়াটা অনুচিত হবে বলে জানিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।  নারীরা কোনও অংশেই পুরুষদের থেকে কম নন স্বীকার করে বলা হয়, কমান্ডিং অফিসার পদে নারীরা থাকলে বাহিনীর সদস্যরা, যাদের অধিকাংশই গ্রামাঞ্চল থেকে আসেন, তারা নারী অফিসারকে নাও মেনে নিতে পারেন।

_110802701_gettyimages-462350168

১৯৯২ সাল থেকেই ভারতে সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি শাখায় শর্ট সার্ভিস কমিশনড অফিসার হিসাবে নারীদের নিয়োগ করা শুরু হয়। সরাসরি যুদ্ধে নারীদের এখনও পাঠানোর নিয়ম নেই, তারা সহযোগী শাখাগুলিতে কাজ করেন।

সুপ্রিম কোটে আরও যুক্তি দেখানো হয়, নারীদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা পুরুষ অফিসারদের থেকে কম এবং যদি যুদ্ধ-বন্দী হিসাবে নারী অফিসাররা ধরা পড়েন শত্রু দেশের হাতে, তখন তাদের বেশি বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হবে - এইসব যুক্তিও দেখানো হয়েছে।

এই মন্তব্যের পর সাবেক সেনা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আইনজীবীসহ অনেকেই এই পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের সমালোচনা করছেন। সুপ্রিম কোর্টের যে বেঞ্চে এই সংক্রান্ত মামলাটির শুনানি চলছে, তারাও বলেছে মানসিকতার পরিবর্তন হলেই নারী অফিসারদের কমান্ডার হিসাবে নিয়োগ করা যায়।

এর আগে সেনাবাহিনীতে নারী অফিসারদের নিয়োগ করা নিয়ে প্রাথমিকভাবে আপত্তি তুলেছিলেন দেশের শীর্ষ সেনা অফিসারদের একাংশও। এদেরই মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরী। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি এবং আরও কয়েকজন সিনিয়ার অফিসার আপত্তি করেছিলাম বাহিনীতে সরাসরি যুদ্ধের ক্ষেত্রে নারীদের নিয়োগের ব্যাপারে। কিন্তু সরকার যখন সিদ্ধান্ত নিল, সেটা সেনা অফিসার হিসাবে আমরা মানতে বাধ্য।’

তিনি বলেন, "তবে একবার যখন নারীদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েইছে, তাহলে তাদের কেন তাদের কেন কমান্ডিং অফিসার হিসাবে নিয়োগ করা যাবে না? নারী অফিসাররা যাতে নেতৃত্ব দেওয়ার কাজটা সুষ্ঠুভাবে করতে পারে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বাধা সরকারকেই দূর করতে হবে।"

২০১০ সালে দিল্লি হাইকোর্ট নারী অফিসারদেরও স্থায়ী কমিশন্ড অফিসার হিসাবে নিয়োগ করার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই মামলাই এখন সুপ্রিম কোর্টে গেছে।

নারী সেনা অফিসারদের হয়ে যিনি সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি লড়ছেন, সেই সিনিয়ার অ্যাডভোকেট ঐশ্বর্য ভাট্টি বলেন, গত ২৬-২৭ বছর ধরে নারী অফিসারেরা সেনাবাহিনীর ১০টি শাখায় কাজ করছেন। এবং তারা বারে বারে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। তিনি বলেন, 'তারা কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় কাজ করেন, শত্রুর গুলির মুখেও তাদের পড়তে হয়। বাহিনীর পুরুষ অফিসারদের যত বিপদের ঝুঁকি নিতে হয়, ওই এলাকায় নিযুক্ত নারী অফিসারদেরও ঝুঁকি ঠিক ততটাই। কিন্তু তবুও নারীদের স্থায়ী কমিশন্ড অফিসার হতে দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে একই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেও নারী অফিসারেরা দ্বিতীয় শ্রেণীর অফিসার হয়ে থেকে যাচ্ছেন।’