অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে না পাঠানোর আহ্বান অস্ট্রেলীয় এমপির

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে না পাঠাতে যুক্তরাজ্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দুইজন অস্ট্রেলীয় এমপি। মঙ্গলবার লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ আহ্বান জানান। এ সময় তারা বলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উচিত জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তরের প্রচেষ্টায় ক্ষান্ত দেওয়া।noname
এই দুই অস্ট্রেলীয় এমপি হচ্ছেন অ্যান্ড্রু উইলকি এবং জর্জ ক্রিস্টেনসেন। তারা উভয়েই সাড়া জাগানো বিকল্প ধারার সংবাদমাধ্যম উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে দেখা করতে যুক্তরাজ্য গিয়েছিলেন।

অ্যান্ড্রু উইলকি অস্ট্রেলিয়ার একজন স্বতন্ত্র এমপি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অ্যাসাঞ্জকে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের গোপন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হ্যাকিং-এর ষড়যন্ত্রের দায়ে অভিযুক্ত করেছে। এমন অবস্থায় দেশটির কাছে তাকে হস্তান্তর একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করবে।

তিনি বলেন, এটি এমন একটি নজির স্থাপন করবে যে, আপনি যদি এমন সাংবাদিক হন আর আপনার কাজ যদি বিশ্বের যে কোনও সরকারের কাছে আপত্তিকর বলে প্রতীয়মান হয়, তাহলে আপনি সেই দেশে প্রত্যাবাসনের ঝুঁকিতে থাকবেন।

অ্যান্ড্রু উইলকি বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক মামলা। এখানে যে বিষয়টি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তা কেবল জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের জীবন নয়। এখানে সাংবাদিকতার ভবিষ্যতের বিষয়টি জড়িত।

অস্ট্রেলীয় নাগরিক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ২০১০ সালে পেন্টাগন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাখ লাখ সামরিক এবং কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস করে দিয়ে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দেন। এর মধ্যে আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন বাহিনীর আগ্রাসন নিয়ে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ও গোপন কূটনৈতিক নথিও ছিল। এসব নথিতে ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর বর্বরতা স্পষ্ট হয়।

মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়টি নিয়েও আলোকপাত করেন অ্যান্ড্রু উইলকি। তিনি বলেন, ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী বাগদাদে দফায় দফায় লড়াইয়ের একটি মিথ্যা দাবি করেছিল। এ সংক্রান্ত ভিডিও প্রকাশ করে অ্যাসাঞ্জ কোনও অপরাধ করেননি।

আরেক অস্ট্রেলীয় এমপি জর্জ ক্রিস্টেনসেন বলেন, আমি ট্রাম্পের বিশাল ভক্ত। আমি বোজো (বরিস জনসন)-এরও বিশাল ভক্ত। তবে আমি এর চেয়েও যেটার বেশি ভক্ত তা হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা।

২০১২ সালের জুন থেকে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাহার করে তাকে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে তুলে দেয় ইকুয়েডর। ওইদিনই তাকে জামিনের শর্ত ভঙ্গের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ব্রিটিশ আদালত।  বেলমার্শ নামক কুখ্যাত কারাগারে সাজা ভোগ করছেন অ্যাসাঞ্জ।

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকতার ধারাকে বদলে দেওয়া অ্যাকটিভিস্ট ও সাংবাদিক অ্যাসাঞ্জকে রাখা হয়েছে এমন এক কুখ্যাত কারাগারে, যেটিকে কেউ কেউ ‘যুক্তরাজ্যের গুয়ানতানামো বে’ নামে ডেকে থাকেন। ৯/১১-এর হামলার পর প্রণীত এক বিতর্কিত সন্ত্রাসী আইনে অভিযুক্তদের বেলমার্শ নামক ওই কারাগারটিতে রাখা হতো। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডস আইনটি পাসের সময় তাদের মতামতে বলেছিল: এটি মৌলিক মানবাধিকারবিরোধী আইন। টুইন টাওয়ার হামলা কিংবা আইএস’র জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িত সন্ত্রাসীসহ ভয়ঙ্কর সব অপরাধে অভিযুক্তরাই বেলমার্শ কারাগারে সংখ্যাগরিষ্ঠ।