আবারও সু চিকে দেওয়া সম্মাননা কেড়ে নিলো লন্ডন

 

এবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি’কে দেওয়া সম্মান কেড়ে নিল লন্ডন সিটি করপোরেশন (সিএলসি)। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের ঘটনাকে সামনে এনে বৃহস্পতিবার এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে রাজধানী শহরটির কর্তৃপক্ষ।  আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লন্ডনের ঐতিহাসিক এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো পরিচালনা করা সিএলসি কর্তৃপক্ষের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভোটে সু চির সম্মান বাতিল করা হয়।

noname

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যা, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের বাস্তবতায় জীবন বাঁচাতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। সু চি এর বিপরীতে কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নেননি। বরং গণহত্যার কথা অস্বীকার করে সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের পক্ষে সাফাই গেয়ে আসছেন তিনি। এ কারণে তিনি গণতান্ত্রিক মিয়ানমারের পক্ষে তার সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে পাওয়া প্রায় সমস্ত সম্মাননা হারিয়েছেন।

২০১৭ সালের মে মাসে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সু চি’কে সম্মাননা দিয়েছিল সিএলসি। এর মাধ্যমে মিয়ানমার নেত্রীর অনেক বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য অহিংস লড়াই এবং মানুষের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে তার অবিচল নিষ্ঠার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। সে সময় ইউরোপ সফরে থাকাকালীন সু চি লন্ডনে ওই সম্মাননা প্রদানের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং পুরস্কার গ্রহণ করেন। তবে রোহিঙ্গা সমস্যার জন্য সেখানে তিনি বিক্ষোভের সম্মুখীন হয়েছিলেন।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধনের বিপরীতে নিজের অস্পষ্ট অবস্থানের কারণে বহু আগেই নিজের অর্জিত সম্মান হারিয়েছেন একসময়কার এশিয়ার ম্যান্ডেলা খ্যাত সু চি। এখনকার রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা সু চি সবশেষ গত বছর ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) নিজ দেশের সেনাবাহিনীর গণহত্যার পক্ষে সাফাই গাইতে হাজির হয়ে নিজের কষ্টার্জিত আন্তর্জাতিক সম্মানের অবশেষটুকুও নষ্ট করেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, আইসিজে মিয়ানমারকে গণহত্যা মামলায় অভিযুক্ত করার পর সু চি এখন কেবলই একজন ক্ষমতালিপ্সু স্বৈরাচার, যিনি ক্ষমতা ধরে রাখার স্বার্থে নিজ দেশের সামরিক বাহিনীর গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের পক্ষে দাঁড়ান।

ডিসেম্বরে হেগে আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানিতে সু চি’র অবস্থানের পর সম্মানটির জন্য তিনি যোগ্য নন বলে একমত হয় সিএলসি। শুনানিতে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ অস্বীকার করেন শান্তিতে নোবেলজয়ী নেত্রী। এরআগে কানাডার পার্লামেন্টের দেওয়া সম্মানসূচক নাগরিকত্ব, ব্রিটেনের অক্সফোর্ড শহরের দেওয়া সম্মাননা, গ্লাসগো নগর কাউন্সিলের দেওয়া ফ্রিডম অফ সিটি খেতাব, লন্ডনভিত্তিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেওয়া সম্মাননা হারিয়েছেন সু চি।