সেনাবাহিনীর ক্ষমতা হ্রাসের বিপক্ষে মিয়ানমারের পার্লামেন্ট

মিয়ানমারের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর প্রভাব কমাতে দেশটির নেত্রী অং সান সু চির দলের দেওয়া প্রস্তাবে পার্লামেন্টের অনুমোদন মেলেনি। প্রথমদিন সংবিধান সংশোধনীর ভোটে দুই তৃতীয়াংশ আইনপ্রণেতারা ক্ষমতাসীন দলের আনা সংশোধন প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান না নেওয়ায় সেনাবাহিনীর ক্ষমতা অক্ষুণ্নই থাকছে।

miyanmar-suchi-600x337

কথিত গণতান্ত্রিক উত্তরণের নামে মিয়ানমারে আদতে জারি রয়েছে সেনাশাসন। ২০০৮ সালে প্রণীত সংবিধান অনুযায়ী সংবিধান সংশোধনের যে কোনও প্রস্তাব পার্লামেন্টে পাস হতে হলে ৭৫ শতাংশের বেশি সমর্থন প্রয়োজন। অথচ দেশটির পার্লামেন্টের এক-চতুর্থাংশ আসন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা পরিষদের ১১টি আসনের মধ্যে ছয়টি আসনেও রয়েছেন সেনাবাহিনী মনোনীত ব্যক্তিরা। গণতান্ত্রিক সরকার বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে তাদের। সংবিধানে নাগরিকত্ব বিবেচনায় সু চির প্রেসিডেন্ট হওয়ার অধিকারও ক্ষুণ্ন করে রাখা হয়েছে।

সম্প্রতি পার্লামেন্টে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা হ্রাস সম্পর্কিত প্রস্তাব উত্থাপন করে এনএলডি। এরপর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত সাংবিধানিক সংস্কার সম্পর্কিত সংসদীয় বিতর্কে অংশ নেন আইনপ্রণেতারা। সর্বমোট ১৪৯ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে সেনা নিযুক্ত আইনপ্রনেতা ও এনএলডি থেকে ৫০ জন করে, ইউএসডিপি থেকে ২৬ জন এবং জাতিগত দলগুলোর সদস্যরা আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন।

সামরিক জান্তা সরকারের প্রস্তাবিত খসড়া অনুযায়ী পাসকৃত ২০০৮ চার্টার সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছিলো ক্ষমতাসীন দল। এই সংশোধনীর প্রস্তাব পাস হলে ১৫ বছরের মধ্যে সামরিক এমপিদের সংখ্যা পার্লামেন্টে কমে আসতো। আর প্রতিরক্ষা বিভাগে কমান্ডার ইন চিফকে সব সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ ক্ষমতাধিকারীর পদ থেকে বিলুপ্ত হতো। তবে দুই তৃতীয়াংশ আইনপ্রণেতার সমর্থন না মেলায় তা ঘটেনি।

ক্ষমতাসীন এনএলডি পাটির এক মুখপাত্রের এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। কিছু জানাননি সরকারি মুখপাত্রও।  আইনপ্রণেতারা সংবিধান থেকে ‘ডিসিপ্লিনড’ শব্দটাও বাদ দেওযার প্রস্তাবটিও নাকচ করেছেন। সেখানে দেশটিকে ‘জেনুইন, ডিসিপ্লিনড মাল্টি-কালচারাল ডেমোক্রেটিক সিস্টেম’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক দলে সরকারি কর্মকর্তাদের যুক্ত থাকা বিষয়ক সংশোধনীতে সমর্থন দিয়েছেন তারা।

২০ মার্চ পর্যন্ত অন্যান্য প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলোর ওপর ভোটগ্রহণ চলবে। বিশ্লেষকরা বলছেন সামরিক বাহিনী সেখানেও ভেটো দিতে পারে। ফলে প্রস্তাবগুলো পাস হওয়ার সম্ভাবনা কম। অন্যদিকে এনএলিডির লক্ষ্য হচ্ছে সু চিকে প্রেসিডেন্ট হওয়া রোধ করা আইন সংশোধন করা। তার সন্তানরা বিদেশি নাগরিক হওয়ায় দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে পারছেন না তিনি।

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সু চি সংবিধান সংস্কার নিয়ে চাপের মধ্যে রয়েছে। তাকে ঘিরে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার যেই আশার সঞ্চার হয়েছিলো তাতে হতাশ হয়েছে মিয়ানমার।

সামনের বছর দেশটিতে আবারও জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ২০১৬ সালে মাইলফলক জয় পান সু চি। ২০১১ সাল থেকেই সেখানে গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরু হয়। তবে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের ঘটনায় চাপের মুখে পড়ে সু চি সরকার। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তারা সেই দাবি অস্বীকার করে জানায়, পুলিশ চেকপোস্টে হামলা করা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধেই শুধু অভিযান চালিয়েছে তারা।