শিশু থেকে তরুণ কিংবা গর্ভবতী নারী; করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা থেকে রেহাই মিলছে না কারও। লন্ডনের বাঙালিপাড়াতেও বিরাজ করছে ভয়াবহ পরিস্থিতি। রবিবার এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণে ২৪ বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথাযথভাবে কোয়ারেন্টিন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে না পারায় পূর্ব লন্ডনেও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
করোনা আক্রান্ত হয়ে অসহনীয় দুর্ভোগ সহ্য করে বর্তমানে খানিকটা সুস্থ হয়েছেন পূর্ব লন্ডনে বসবাসরত এমাদ আহমদ। মৌলভীবাজারের বাসিন্দা এমাদ রবিবার সকালে টেলিফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি যখন বিছানায় কাতরাচ্ছিলাম তখন আমার শ্বশুর রয়েল লন্ডন হাসপাতালে মারা যান।’
‘আমি শ্বাস নিতে পারছিলাম না, খুব কষ্ট হচ্ছিল। এ ভাইরাস কারও শরীরে তীব্র মাত্রায় আবার কারও শরীরে কিছুটা মৃদুভাবে আক্রমণ করে। আমার শরীরে করোনার আক্রমণ ততটা তীব্র ছিল না বলেই দ্রুত সুস্থ হয়েছি'—বলেন এমাদ।
অস্ট্রেলিয়ায় গবেষণারত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও লেখক ডা. মুশফিকুস সালেহিন তারেক রবিবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ব্রিটেনে করোনায় মারা যাওয়া বাংলাদেশিরা পারিবারিকভাবে তরুণদের সঙ্গেই থাকতেন। ডা. মুশফিকের আশঙ্কা, তরুণদের মাধ্যমেই তারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ হাজার ৩৮৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ৪,৯৩২ জনের। অনেকেই মনে করেন, করোনা মোকাবিলায় বরিস জনসনের সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। সেজন্যই আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা এত বেশি।
২৩ মার্চ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যুক্তরাজ্যে ৩ সপ্তাহব্যাপী লকডাউনের ঘোষণা দেন। তবে স্পেন আর ইতালির পরিস্থিতি ততদিনে ভয়াবহ। ব্রিটেনে বসবাসরত লেখক ড. রেনু লুৎফা বলেন, বরিস জনসন পরিস্থিতির দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। লকডাউন যেমন বিলম্বিত হয়েছে, তেমনি করোনা সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তাদের সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব দেখা গেছে।
আক্রান্ত মো. উজ্জ্বল মিয়া দীর্ঘদিন ধরে লন্ডন প্রবাসী। রাজনগর উপজেলার বাসিন্দা উজ্জ্বল এই প্রতিবেদককে টেলিফোনে জানান, জ্বর-বমির ভাব, খাবারে অরুচি নিয়ে তিনি হাসপাতালে যান। সেখান থেকে তাকে গরম পানির সাথে লেবুর রস, জুসসহ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। ওষুধ হিসেবে দেওয়া হয় শুধু প্যারাসিটামল। দশ দিন পর এখন তিনি অনেকটা সুস্থ।
লন্ডনের ল্যুকাম প্র্যাকটিসে কর্মরত একজন চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনে অপেক্ষাকৃত ছোট ঘরে বেশি মানুষের বসবাস। সে কারণে সম্ভবত হোম কোয়ারেন্টিন যথাযথ হয়নি। আবার সতর্কতামূলক অন্যান্য পদক্ষেপও নিতে পারেনি তারা। সে কারণেই হয়তো মৃত্যু এড়ানো যায়নি।
পূর্ব লন্ডনের সিনিয়র জিপি ( জেনারেল প্র্যাকটিসার) ডা. আনোয়ারা আলী সেখানকার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
কেবল পূর্ব লন্ডনেই নয়, বাঙালি অধ্যুষিত দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বার্মিংহামেও করোনার প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। এ সপ্তাহে বাংলাদেশি অধ্যুষিত আরেক শহর লুটনেও করোনায় দুই ব্রিটিশ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।