রাস্তায় পড়ে যাওয়া দুধ নিয়ে মানুষ আর কুকুরের কাড়াকাড়ি

দুধবাহী গাড়ি থেকে রাস্তায় গড়িয়ে পড়ছে দুধ। একপাশ থেকে সেই দুধ দুই হাতের মধ্যে তুলে নিতে চাইছে এক ক্ষুধার্ত ব্যক্তি আর অন্য পাশে সেই দুধ চেটে খাচ্ছে একপাল কুকুর। হৃদয় মুচড়ে ওঠা এই দৃশ্য ভারতের আগ্রার রাম বাগ এলাকা থেকে ধারণ করা হয়েছে। সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, ভারত জুড়ে চলা লকডাউনে হতদরিদ্র মানুষের অসহায়ত্বের তীব্রতা তুলে ধরেছে এই দৃশ্য।ভারতের আগ্রা থেকে সোমবার সকালে তোলা হয়েছে এই ছবি

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম শনাক্ত হওয়ার প্রায় দুই মাস পর গত মাসে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার এই লকডাউন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে আশা করা হচ্ছে, লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়বে। করোনা মহামারি ঠেকাতে নেওয়া এই পদক্ষেপের জেরে দারিদ্রতা ও ক্ষুধার কবলে পড়েছে দেশটির লাখ লাখ মানুষ।

সোমবার ভারতের অন্যতম দর্শনীয় স্থান তাজ মহল থেকে মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরে রাস্তায় পড়ে যাওয়া দুধ নিয়ে মানুষ ও কুকুরকে টানাটানি করতে দেখা যায়। এনডিটিভির এক সংবাদকর্মীর টুইটারে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, দৃশ্যত এক ভবঘুরে মরিয়া হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা দুধ মাটির পাত্রে তুলছে। আর অপর পাশেই এক পাল কুকুর একই দুধের ধারায় মুখ দিয়ে চেটে পেট ভরার চেষ্টা চালাচ্ছে

ভারত সরকার গত মাসে লকডাউন ঘোষণার পরই বিপাকে পড়ে বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা অভিবাসী শ্রমিকেরা। অবরুদ্ধ দেশে খাবার পাওয়ার আশঙ্কা থেকে পায়ে হেঁটে নিজ নিজ পরিবারের উদ্দেশে রওনা দেয় হাজার হাজার শ্রমিক। গত মাসে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, এই সংকটের কারণে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে কাজ করা প্রায় ৪০ কোটি ভারতীয় নাগরিক দারিদ্রের ঝুঁকিতে পড়েছে।

এদিকে প্রায় ৮০ কোটি মানুষের জন্য সরাসরি নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। তবে গত কয়েক সপ্তাহে এনডিটিভিকে সাক্ষাৎকার দেওয়া বেশিরভাগ মানুষই বলেছেন, তারা এখন পর্যন্ত কোনও সহায়তাই পাননি। ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে কেউ কেউ আবার লাঠি পেটারও শিকার হয়েছেন। আবার অনেকেই তপ্ত রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছেন।

অনেক বিশেষজ্ঞই বলছেন, ভারতে করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রেখেছে লকডাউন। তবে বিরোধীদলগুলোর অভিযোগ পর্যাপ্ত পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি ছাড়াই এই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, জানুয়ারিতে প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর সোমবার পর্যন্ত দেশটিতে ৯ হাজার ৩৫২ জনের শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা গেছে। এদের মধ্যে ৮৫৬ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩২৪ জনের।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর আগেই ভারতের অর্থনৈতিক গতি গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, লকডাউনের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বেকারত্বের পরিমাণ রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তারা।