যুক্তরাষ্ট্র সৃষ্টিতে ভূমিকা
স্ট্রসের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকেই পাশে আছে মুসলিমরা। মহাদেশীয় সেনাবাহিনীর কমান্ড অব চিফ এবং পরবর্তীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জেনারেল জর্জ ওয়াশিংটনের অধীনে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছিলেন সেখানেও রয়েছে মুসলিমদের নাম। ১৭৭৫ সাল থেকে ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত সময়ে ভার্জিনিয়া লাইনের জন্য লড়াই করেছেন বাম্পেত মোহাম্মদ। ওয়াশিংটনের অধীনে কাজ করেছেন ইউসূফ বেন আলী যিনি একজন উত্তর-আফ্রিকান আরব। কেউ কেউ দাবি করেন, বাংকার হিলের লড়াইয়ে ব্রিটিশ মেজর জেনারেল জন পিটকেয়ার্নের ওপর গুলি চালিয়ে তাকে হত্যাকারী ব্যক্তি পিটার বাকমিনস্টারও একজন মুসলিম আমেরিকান। কেউ কেউ আবার বলে থাকেন, বাকমিনস্টার পরে তার ডাকনামটি পরিবর্তন করে সালেম কিংবা সালাম রেখেছিলেন,আরবি ভাষায় যার অর্থ শান্তি। তবে যাই হোক না কেন, প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের কিন্তু নিজের সেনাবাহিনীতে মুসলিমদের অন্তর্ভূক্ত রাখার ব্যাপারে কোন সমস্যা ছিল না। আর তার মধ্য দিয়ে এ বার্তাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে, মার্কিন দেশপ্রেমিক হতে নির্দিষ্ট ধর্ম কিংবা জাতিগোষ্ঠীর হতে হয় না।
তবে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রাচীন সেই মার্কিন নীতির মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করেন স্টুয়ার্ট।
যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথম স্বীকৃতি মুসলিম দেশের
১৭৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে যে দেশটি প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল সেটি একটি মুসলিম দেশ। সেসময় প্রথম স্বীকৃতি দানকারী মরক্কোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি ও বন্ধুত্বের একটি চুক্তিও সই হয়েছিল যা এখনও বলবৎ আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শহর গড়ার কারিগর যখন মুসলিম
স্টুয়ার্টের মতে, অবকাঠামো আর নকশার দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে এখন আধুনিক আর মজবুত দেখায়, সেটা হয়তো সম্ভব হতো না যদি বাংলাদেশি-বংশোদ্ভূত মার্কিন মুসলিম ফজলুর রহমান খান না থাকতেন। তার অবদানের জন্য ফজলুরকে ‘আইনস্টাইন অব স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বলে ডাকা হয়ে থাকে। ফ্রেম টিউবের নতুন কাঠামোগত সিস্টেম আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলো আকাশছোঁয়া ভবনে ভরে তুলতে সহায়তা করেছেন এ মুসলিম। তার এই ফ্রেম টিউব পদ্ধতি ছাড়া হয়তো টুইন টাওয়ার, সিয়ার্স টাওয়ারসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত অনেক ভবনই নির্মাণ করতে পারত না যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৭৩ সাল থেকে প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত বিশ্বের উচ্চতম ভবনের তালিকায় ছিল সিয়ার্স টাওয়ার। ১৯৮২ সালে ফজলুর রহমান প্রয়াত হলেও পরবর্তীতেও ট্রাম্প টাওয়ারসহ উৎচু সব ভবন তৈরি হয়েছে তার দেখানো পদ্ধতিতেই।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে অবদান
ব্রেন টিউমারের চিকিৎসায় সরাসরি ব্রেনে কেমোথেরাপি পৌঁছে দেয়ার মত যুগান্তকারী আবিষ্কারটি যদি না হত তবে হয়তো মার্কিনিরাসহ অনেকেই মারা যেতেন কিংবা প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ভুগতেন এই রোগের কারণে। আর ১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের ডিভাইসের আবিষ্কার হয়েছে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মুসলিম নিউরোসার্জন আইয়ুব ওমায়ার হাত ধরে।
খেলাধুলা
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট মুসলিমদের ক্রীড়া তারকা হিসেবে অভিহিত করায় টুইটারে সমালোচনা করেছিলেন ট্রাম্প। তবে স্টুয়ার্টের প্রশ্ন,২০০৭ সালে ট্রাম্প মুহাম্মদ আলী অ্যাওয়ার্ড যার হাত থেকে নিয়েছিলেন এবং গত মে মাসে যার সঙ্গে তোলা ছবি পোস্ট করে তাকে বন্ধু বলে দাবি করেছিলেন সেই মুসলমান তারকা মোহাম্মদ আলীকে কীভাবে ভুলে গেলেন ট্রাম্প? এছাড়া বাস্কেটবল আইকন শাকিল ও’ নিল, এনবিএ তারকা কারিম আবদুল-জাব্বারসহ অনেক মুসলিমই যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়াঙ্গন আলোকিত করে রেখেছেন।
বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে অবদান
কেমিক্যাল ব্যবহারের কারণে পরিবর্তনজনিত অবস্থাগুলো নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার জিতে নেন মিসরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন মুসলিম নাগরিক আহমেদ জিওয়াইল। দ্রুত আণবিক পরিবর্তনজনিত গবেষণা কাজে অবদানের কারণে তাকে ‘ফাদার অব ফেমটোকেমিস্ট্রি’ বলে ডাকা হয়ে থাকে। বর্তমানে ৬৯ বয়সী এ রসায়নবিদ জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কাটিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদে কাজ করেছিলেন আহমেদ। বিজ্ঞানে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তার নামে ডাকটিকিটও উন্মোচন করা হয়েছিল।
হাস্যরস
মুসলিমরা আবার হাস্যরসও করতে জানে? পশ্চিমা বিশ্বে বিরাজ করা ইসলামভীতির কারণে অনেকের মনে এমন প্রশ্নটি জাগতেই পারে। কিন্তু সেটি তারা করতেই পারেন বলে উল্লেখ করেছেন স্টুয়ার্ট। এক্ষেত্রে চলতি বছরেরই একটি ঘটনা তুলে ধরেন তিনি। এ বছরের জানুয়ারিতে, এক টুইটে রুপার্ট মারডক বলেন, ‘হতে পারে বেশিরভাগ মুসলিমই শান্তিপূর্ণ, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের ক্রমবর্ধমান জিহাদি ক্যান্সারকে ধ্বংস না করতে পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের দায়ী করা হবে।’ রুপার্টের এ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা টুইট করেন আজিজ আনসারি। হাস্যরসের জন্য পরিচিত এ ব্যক্তি টুইটারে বলেন, ‘রুপার্ট, আমরা কি ধাপে ধাপে নির্দেশনা পেতে পারি? কিভাবে আমার ৬০ বছর বয়সী বাবা-মা সন্ত্রাসী সংগঠন ধ্বংসে সহায়তা করতে পারে? একটু পরামর্শ দেবেন কি?’
মডার্ন রোমান্স:অ্যান ইনভেস্টিগেশন নামের বইতে নিজেকে নাস্তিক বলে দাবি করলেও মূলত সাউথ ক্যারোলিনার একটি তামিল মুসলিম পরিবারে জন্ম হয় আনসারির। এছাড়া ডেভ চ্যাপেলের নামটিও বলা যায়। রবিন হুড:ম্যান ইন টাইটস চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে সাড়া জাগানো এ শিল্পী ১৯৯৮ সালে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। তবে এ ব্যাপারে তিনি কোন কথা বলেননি। কেন? সে প্রশ্নের উত্তরে ২০০৫ সালে টাইম ম্যাগাজিনকে তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণত জনসমক্ষে ধর্ম নিয়ে কথা বলতে চাই না। কারণ আমি চাই না, এমন একটি সুন্দর জিনিসের সঙ্গে তারাও আমার মত গা ভাসিয়ে দিক।’ সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
/এফইউ/বিএ/