লকডাউনের মধ্যে খাবার ও পানি সংকটে স্পেনের হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিক

খাবার আর পানি সংকট নিয়ে লকডাউনের মধ্যে চরম পরিস্থিতিতে স্পেনে আটকা পড়েছে হাজার হাজার কর্মী। দক্ষিণাঞ্চলীয় হুয়েলভা ও আলমেরিয়া প্রদেশের বিভিন্ন খামারে কর্মরত এসব শ্রমিকদের বেশিরভাগই অনিবন্ধিত। কার্ডবোর্ড আর প্লাস্টিকের আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া এসব শ্রমিকদের স্থানীয় ইউনিয়ন কর্মীরা কিছু সহায়তা দিয়ে আসলেও তা যথেষ্ট নয়। ইউনিয়ন কর্মীদের সহায়তা দেওয়া ব্রিটিশ দাতব্য প্রতিষ্ঠান এথিক্যাল কনজুমারের কর্মকর্তা ক্লেয়ার কার্লাইল বলেছেন, বহু বছর ধরে শ্রমিকদের অবহেলা করে আসার ফলাফল বর্তমান পরিস্থিতি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান এই খবর জানিয়েছে।noname

স্পেনের হুয়েলভা ও আলমেরিয়া প্রদেশের বিভিন্ন খামার থেকে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ফল ও সবজি সরবরাহ করা হয়। এসব এলাকার বিশালাকারের গ্রিনহাউজ খামার থেকে উৎপাদিত পণ্য ইউরোপীয় ভোক্তাদের ঘরে পৌঁছায়। এসব খামারে কাজ করে মূলত নিবন্ধহীন অভিবাসী শ্রমিকেরা। করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে গত মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে স্পেনে লকডাউন শুরু হলে আটকা পড়ে এসব শ্রমিক। তাদের খাবার, পানিসহ নিত্যপণ্য সরবরাহের চেষ্টা করছে স্থানীয় ইউনিয়ন কর্মীরা।

স্থানীয় ইউনিয়ন কর্মীদের সহায়তা দেয় ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা এথিক্যাল কনজুমার। ওই সংস্থার কর্মকর্তা ক্লেয়ার কার্লাইল জানান, গত ১৮ মার্চ ওই শ্রমিকদের কাছে স্পেনের সেনাবাহিনী গিয়ে তাদের ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়। সেখান থেকে খাবার পানির উৎস কয়েক কিলোমিটার দূরে হওয়ার পরও তাদের ঘরে থাকতে বলা হয়। করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যে বর্তমানে তাদের কাছে সপ্তাহে দুই দিন খাবার পানির ট্রাক যায়। কাজে থাকার কারণে ওই পানি নিতে ব্যর্থ হলে কাজ শেষে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে খাবার পানি আনতে হয় বলে জানান কার্লাইল।

ক্লেয়ার কার্লাইল বলেন, ‘নিয়োগদাতারা বহু বছর ধরে মৌলিক অধিকার দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের চরম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আর এখন এই মহামারি পরিস্থিতিতে সংকটের পর্যায়ে নিয়ে গেছে।’ এসব শ্রমিকেরা ভাইরাসটি থেকে কোনও ধরনের সুরক্ষা ছাড়াই কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। অপরিচ্ছন্ন বাসস্থান আর খামারে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কাজ করতে থাকা তাদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।noname

মালি থেকে আসা আমাদু স্পেনের হুয়েলভা প্রদেশের একটি খামারে কাজ করেন। লেপে শহরে কালেকটিভ আফ্রিকান ওয়ার্কাস নামে একটি সংগঠনের সদস্য তিনি। আমাদু এথিক্যাল কনজুমারকে বলেন, ‘আমরা এখানে থাকতে ভয় পাচ্ছি, কারণ এখন পর্যন্ত আমরা কোনও ধরনের সহায়তা পাইনি। পানি, গ্লোভস কিংবা মাস্ক কোনও কিছুই না।’

স্থানীয় এগ্রিকালচালারাল ইউনিয়ন সোক-স্যাট আলমেরিয়া ও হুয়েলভা প্রদেশের শ্রমিক বসতিগুলোতে খাবার, সাবান, ওষুধ ও শিশুদের জন্য ন্যাপকিন সরবরাহ করছে। সোক-স্যাট বলছে, ‘স্থানীয় প্রশাসন সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফল ও সবজির মূল উৎপাদক স্পেন। স্পেনে উৎপাদিত এসব পণ্যের ৯৩ শতাংশই যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সে রফতানি হয়। লকডাউনের মধ্যে চরম পরিস্থিতিতে পড়া হুয়েলভা ও আলমেরিয়া প্রদেশের শ্রমিকদের উৎপাদিত পণ্যই ইউরোপের সরবরাহ শৃঙ্খল সচল রাখে। হুয়েলভাতে স্পেনের বেরি ফলের ৯৭ শতাংশ উৎপাদিত হয় আর আলমেরিয়ার কর্মীরা দেশটির সবজি ও ফল রফতানির প্রায় ৩৫ শতাংশ উৎপাদন করে থাকে।noname

জাতিসংঘের চরম দারিদ্র ও মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ফিলিপ অ্যালস্টোন স্পেন সফর করেন। তার প্রতিবেদনে হুয়েলভার অভিবাসী শ্রমিকদের পরিস্থিতি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করা হয়। তিনি ওই প্রতিবেদনে লেখেন, ‘হুয়েলভার অভিবাসী শ্রমিক কলোনিতে আমি যাদের সঙ্গে দেখা করেছি তাতে বিশ্বের কোথাও এমন পরিস্থিতি দেখিনি। পানি থেকে কয়েক কিলোমিটার দুরে, বিদ্যুৎহীন এবং পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ছাড়াই তারা টিকে আছে। তাদের অনেকেই এসব কলোনিতে বহু বছর ধরে বাস করলেও একটা বাড়ি করে থাকার ক্ষমতা রয়েছে। তবে তারা বলছেন কেউ তাদের ভাড়াটিয়া হিসেবে নিতে চায় না। তারা দৈনিক ৩০ ইউরোরও কম মজুরি পায়... ২০১৮-১৯ সালের হুয়েলভার স্ট্রবেরি রফতানি আয় ছিলো ৫৩. ৩ কোটি ইউরো।’

ধারণা করা হয়েন থাকে ওই এলাকার অভিবাসী শ্রমিকদের এক তৃতীয়াংশের বৈধভাবে কাজ করার নথি নেই। লকডাউনের মধ্যে এসব শ্রমিকেরাই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন। গত সপ্তাহে ২৭টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার একটি জোট অভিবাসী শ্রমিকদের বৈধ করে নেওয়ার আহ্বান জানায়। একই সঙ্গে করোনাভাইরাস থেকে তাদের সুরক্ষারও আহ্বান জানান তারা।