আরব বসন্তের পর এবার আমেরিকান বসন্ত!

২০১০ সালে তিউনিসিয়ায় শুরু হওয়া আরব বসন্ত ঢেউ ছড়িয়ে গিয়েছিল পুরো মধ্যপ্রাচ্যে। তার শুরুটা ছিল মোহাম্মদ বোআজিজি নামের ২৬ বছরের এক শিক্ষিত ফেরিওয়ালার আগুনে আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে। ওই ঘটনার এক দশক পর ২০২০ সালে দৃশ্যপটে জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক! পুলিশের হাতে তার খুন হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে যে ব্যাপক সহিংস বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে, দেশটিতে এমন ঘটনা বিরল। মোহাম্মদ বোআজিজি-র আত্মাহুতি যেমন আরব বসন্ত ডেকে নিয়ে এসেছিল; জর্জ ফ্লয়েড-এর নৃশংস হত্যাকাণ্ড যেন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ডেকে এনেছে তেমনি আরেক বসন্ত। চীন বা ইরানের মতো মার্কিনবিরোধী দেশগুলো যাকে আখ্যায়িত করছে ‘আমেরিকান বসন্ত’ হিসেবে।

nonameযুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভের এক পর্যায়ে ভয়ে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে আশ্রয় নেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৯৬৮ সালে মার্টিন লুথার কিংয়ের হত্যাকাণ্ডের পর বর্ণবাদের বিরুদ্ধে এমন জনরোষ যুক্তরাষ্ট্রে আর কখনও চোখে পড়েনি। দৃশ্যত এটাকেই লুফে নিয়েছে ওয়শিংটনের প্রধান দুই বৈরি শক্তি বেইজিং ও তেহরান। আমেরিকার মাটিতে এই বিক্ষোভ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে চীনের সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই আলোচনায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত দুটি শব্দ হচ্ছে, ‘আমেরিকান স্প্রিং’ বা আমেরিকান বসন্ত।

চীনের সরকার সমর্থিত পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস বলছে, চীনা সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম উইবোতে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ নিয়ে দুটি হ্যাশট্যাগে কোটি কোটি মানুষ কথা বলছে, শেয়ার করছে। হ্যাশট্যাগ দুটি হচ্ছে #আমেরিকান স্প্রিং এবং #ইউএস রায়ট।noname

গ্লোবাল টাইমস বলছে, আমেরিকার ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড‘ বা দ্বৈতনীতি মানুষের চোখের সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। চীনা এই পত্রিকা বলছে, হংকংয়ে বিক্ষোভ সামলাতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আমেরিকার ঘুম নেই, কিন্তু নিজের দেশের পুলিশ মানুষের ওপর নির্যাতন করছে।

শুধু মিডিয়া বা সোশ্যাল মিডিয়াই নয়, চীনা সরকারও কথা বলতে শুরু করেছে। সোমবার বেইজিংয়ে চীনা পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনও জীবন। তাদের মানবাধিকারের নিশ্চয়তা দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে একটি চলমান অসুখ।’noname

যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক আইন!

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস মুসাভি সোমবার তার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে ইংরেজিতে বলেছেন, ‘আমেরিকার সরকার ও পুলিশকে বলছি, নিজেদের জনগণের ওপর জুলুম নিপীড়ন বন্ধ করুন, তাদের শ্বাস নিতে দিন।’ এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে জারি করা কারফিউকে ইরানের একাধিক পত্রিকায় ‘মার্শাল ল’ বা সামরিক আইন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ইরানের প্রধান একটি দৈনিক কিহানের শিরোনাম ছিল, ‘২৫টি আমেরিকান শহরে সামরিক আইন জারি।’ ওয়াতান ই এমরুত নামে আরেক দৈনিকে লেখা হয়েছে, ‘আমেরিকা এখন সামরিক বুটের নিচে।’

অস্ট্রেলিয়ার সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের ওয়াশিংটন সংবাদদাতা তার এক রিপোর্টে লিখেছেন, রবিবার রাতে হোয়াইট হাউসের বাইরে বিক্ষোভ সমাবেশে মানুষের মুখে তিনি ‘আমেরিকান স্প্রিং’ শব্দ শুনেছেন।

জর্জ ফ্লয়েড-এর এ নির্মম হত্যাকাণ্ড চূড়ান্ত পরিণতিতে আমেরিকান বসন্তে রূপ নিক আর না নিক; রাজনৈতিক কারণে ইতোমধ্যেই বিষয়টি আলোচনায় চলে এসেছে। শেষ পর্যন্ত কী ঘটবে বা পরিস্থিতি কোন দিকে ধাবিত হবে; সেটা সময়ই বলে দেবে। সূত্র: বিবিসি।