হুয়াওয়ে চীনা সামরিক বাহিনীর সমর্থনপুষ্ট : যুক্তরাষ্ট্র

চীনের টেলিকম কোম্পানি হুয়াওয়েসহ দেশটির শীর্ষ ২০টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানই ‘হয় সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন অথবা সমর্থনপুষ্ট।’ এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

মার্কিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া ওই তালিকায় নাম রয়েছে ভিডিও নজরদারির প্রতিষ্ঠান হিকভিশন, চায়না টেলিকম, চায়না মোবাইল এবং এভিআইসি। এই তালিকা আরও বড় হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তে উপনীত হবার মাধ্যমে চীনের বিরুদ্ধে দেশটির নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পথ সুগম হলো বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

বিবিসি-র সংবাদদাতারা বলছেন, চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে স্পর্শকাতর প্রযুক্তি দেশটির সামরিক বাহিনীর কাছে পাচার করছে, মার্কিন কংগ্রেশনাল কমিটি, ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও চীনা ব্যবসায়ে মার্কিন অংশীদারদের জানানোর জন্যই এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির ‘মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রিত’ প্রতিষ্ঠান যারা যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত আছে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখা দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।

চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর এই তালিকা প্রকাশের জন্য সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলের আইনপ্রণেতাদের পক্ষ থেকে পেন্টাগনের ওপর চাপ বাড়ছিল।

২০১৯ সালের নভেম্বরে মার্কিন সিনেটর টম কটন এবং চাক শুমার দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রসকে একটি চিঠি লিখে দেশটির রফতানি নিয়ন্ত্রণ এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত দুইটি নীতি পর্যালোচনার আহ্বান জানান।

ওই চিঠিতে যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চীনা সংযোগ রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন প্রযুক্তি রফতানির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কেন দ্রুত রফতানি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক আইন সংস্কার করছে না সে প্রশ্নও তোলা হয়।

তাদের দাবি ছিল, সামরিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মার্কিন প্রযুক্তি গোপনে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কাছে চলে যাচ্ছে কি না এবং চীনা কর্পোরেশনগুলো সাধারণ নাগরিকেরা ব্যবহার করেন এমন সাধারণ প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশটির সামরিক বাহিনীর জন্য তথ্য সরবরাহ করছে কিনা, সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো হোক।

জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত এই অনুসন্ধান এবং নীতি পর্যালোচনার কাজটি বরার দাবি জানান সিনেটর কটন ও শুমার।

২০১৮ সাল থেকে হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে চীন সরকারের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত থাকার অভিযোগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু চীন ও হুয়াওয়ে বরাবরই এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

কিছু পশ্চিমা দেশ হুয়াওয়ের সরঞ্জামাদি তাদের দেশের টেলিকম নেটওয়ার্কে ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। এর কারণ হিসেবে তারা নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কথা বলছে।

হোয়াইট হাউস ইতোমধ্যেই হুয়াওয়েসহ কয়েকটি চীনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে হুয়াওয়ের কাছে নির্দিষ্ট কিছু প্রযুক্তি সরকারি অনুমতি ছাড়া কোনও মার্কিন কোম্পানি বিক্রি করতে পারবে না।

ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, হুয়াওয়ে আমেরিকার বাণিজ্যিক গোপনীয়তা চুরি করেছে। আর নতুন করে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ তারই একটি জবাব।

হুয়াওয়ে এই মূহুর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিকম কোম্পানিগুলোর একটি। মূলত মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের যন্ত্রপাতি তৈরি করে এটি। এক্ষেত্রে তাদের আগে মূলত নোকিয়া ও এরিকসনের মতো কোম্পানিরগুলোর একচেটিয়া ব্যবসা ছিল। কিন্তু এরইমধ্যে হুয়াওয়ে তাদের ছাড়িয়ে গেছে।

হুয়াওয়ে-র প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেই চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির একজন সাবেক কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠানটির সদর দফতর চীনের শেনজেনে। এক লাখ ৮০ হাজার মানুষ এই কোম্পানিতে কাজ করেন। সূত্র: বিবিসি।