এবার মালয়েশিয়ায় আল জাজিরার সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদ

করোনা মহামারিতে অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে মালয়েশিয়ার সরকারের আচরণ নিয়ে প্রচারিত এক ডকুমেন্টারির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আল জাজিরার বেশ কয়েক জন সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দেশটির পুলিশ। শুক্রবার মালয়েশিয়ার পুলিশ সদর দফতরে আইনজীবীর উপস্থিতিতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশ বলছে, সম্ভাব্য রাষ্ট্রদ্রোহ, মানহানি এবং দেশটির কমিউনিকেশন ও মাল্টিমিডিয়া আইন ভঙ্গের বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তবে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি নিজেদের সাংবাদিকতার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়ে ওই তদন্তের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এর আগে ওই ডকুমেন্টারিতে সাক্ষাৎকার দেওয়া বাংলাদেশি মো. রায়হান কবিরের তথ্য পেতে নোটিশ জারি করেছে মালয়েশিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষ।জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে আসেন আল জাজিরার সাংবাদিকেরা

গত ৩ জুলাই আল জাজিরার ‘১০১ ইস্ট’ অনুষ্ঠানে ‘লকড আপ ইন মালয়েশিয়া’স লকডাউন’ নামে ২৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ওই ডকুমেন্টারি প্রচারিত হয়। এতে করোনাভাইরাস মহামারিতে আটকে পড়া হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসীদের সঙ্গে মালয়েশিয়ার সরকারের আচরণের তদন্ত করা হয়। সেখানে নিজের পরিস্থিতির কথা বলেন রায়হান কবির।

মালয়েশিয়ার সরকারি কর্মকর্তা এবং জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের দাবি করে ওই ডকুমেন্টারির তথ্য ভুল, বিভ্রান্তিকর ও অন্যায্য। ডকুমেন্টারিটির জন্য আল জাজিরাকে দেশের নাগরিকদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব। তিনি দাবি করেন, এতে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী ও বৈষম্যমূলক আচরণের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয়।

মালয়েশিয়ার এসব অভিযোগ জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করে বৃহস্পতিবার আল জাজিরার এক বিবৃতিতে বলা হয়, সংবাদমাধ্যমটি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব, যোগ্যতা এবং নিরপেক্ষতা ধারণ করে। ডকুমেন্টারিটি প্রচারের পর থেকে মালয়েশিয়ায় এনিয়ে যা কিছু ঘটেছে সে বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় ওই বিবৃতিতে।

শুক্রবার পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আল জাজিরার সাংবাদিকদের আইনজীবী হিসিয়াম তেহ পোহ তেইক সংবাদমাধ্যমকে জানান, তার মক্কেলরা পুলিশি তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করছেন। তিনি জোরালোভাবে দাবি করেন ডকুমেন্টারিটির জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সাংবাদিকেরা ব্যর্থ হন। তবে দুটি আলাদা সংবাদ সম্মেলনে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর করা মন্তব্য এতে যোগ করা হয়। আইনজীবী বলেন, ‘আল জাজিরার দিক থেকে কোনও ধরণের বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা ছিল না।’

বেশ কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর স্থানীয় সময় শুক্রবার বেলা তিনটার কিছু পরে আল জাজিরার সাংবাদিকদের পুলিশ সদর দফতর থেকে বের হয়ে আসতে দেখা যায়। এরপরে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পুলিশ প্রধান আবদুল হামিদ বদর জানান, তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত এখনো অ্যাটর্নি জেনারেল নেননি।

আল জাজিরার বিবৃতিতে বলা হয়, ডকুমেন্টারিটিতে অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের দুর্ভোগের ওপর বেশি জোর দেওয়া হলেও এতে ভাইরাসটির বিস্তাররোধে মালয়েশিয়ার সরকারের সাফল্য এবং অভিবাসীদের জন্য মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সংস্থার দেওয়া সরাসরি সাহায্যের ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়।