সবচেয়ে মারাত্মক জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি করোনা: ডব্লিউএইচও

জনস্বাস্থ্য ইস্যুতে এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যতগুলো জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে তার মধ্যে করোনাভাইরাসকেই সবচেয়ে মারাত্মক আখ্যা দিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস আডানোম গেব্রিয়াসিস। এর আগে আরও পাঁচবার এমন পরিস্থিতি ঘোষণা করা হয়। গত দেড় মাসে বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানান সংস্থাটির প্রধান। করোনা মহামারি নিয়ে এ সপ্তাহে ডব্লিউএইচও’র জরুরি পরিস্থিতি বিষয়ক কমিটিকে তাদের মূল্যায়ন পর্যালোচনা করতে বলবেন বলেও জানান তিনি। সোমবার (২৭ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক এই সংস্থাটির প্রধান গেব্রিয়াসিস। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস আডানোম গেব্রিয়াসিস

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর আগে ইবোলা সংক্রমণ নিয়ে দুইবার এবং জিকা, পোলিও এবং সোয়াইন ফ্লু নিয়ে একবার করে মোট পাঁচবার বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যগত জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের বিস্তারের কথা প্রথম জানতে পারে সংস্থাটি। আর এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৬৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যু হয়েছে ছয় লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মানুষের।

সোমবার জেনেভায় ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস আডানোম গেব্রিয়াসিস বলেন, ‘গত ৩০ জানুয়ারি যখন আমি আন্তর্জাতিক উদ্বেগের জন্য জনস্বাস্থ্যগত জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করি... তখন চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল একশ’রও কম আর কোনও মৃত্যুও ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ আমাদের দুনিয়া বদলে দিয়েছে। এটি মানুষ, সম্প্রদায় আর দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করেছে আবার তাদের বিচ্ছিন্ন হতেও বাধ্য করেছে।’

গেব্রিয়াসিস বলেন, ‘আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য আইন মোতাবেক এনিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্যগত জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু খুব সহজেই এটাই সবচেয়ে মারাত্মক।’ ডব্লিউএইচও’র কাছেই এক কোটি ৬০ লাখের বেশি আক্রান্ত ও ছয় লাখ ৪০ হাজারের বেশি মৃত্যুর তথ্য আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখনও মহামারি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গেব্রিয়াসিস বলেন, ‘গত ছয় সপ্তাহে মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।’ ভাইরাসটি মোকাবিলায় বিশ্ব ব্যাপক উদ্যোগ নিলেও সামনে এখনও দুর্গম দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার বাকি রয়েছে বলে জানান তিনি।

সোমবার জেনেভার সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচও বলেছে, সমাধান হিসেবে দীর্ঘমেয়াদে ভ্রমণ নিষিদ্ধ রাখা যাবে না। এর পরিবর্তে সামাজিক শিষ্টাচার ও মাস্ক পরার মতো প্রমাণিত কৌশল গ্রহণ করে ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে দেশগুলোকে আরও বেশি পদক্ষেপ নিতে হবে। ডব্লিউএইচও’র জরুরি কর্মসূচি বিষয়ক পরিচালক মাইক রায়ান বলেন, ‘আনুমানিক ভবিষ্যত পর্যন্ত কোনও একক দেশের সীমান্ত বন্ধ রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে। অর্থনীতি খুলে দিতে হবে, মানুষের কাজ করতে হবে, বাণিজ্য আবারও শুরু করতে হবে।’

তবে নতুন করে সংক্রমণ শুরু হওয়া দেশগুলোতে পুনরায় লকডাউন ঘোষণার দরকার পড়তে পারে বলে স্বীকার করে নেন ডব্লিউএইচও’র ওই কর্মকর্তা। কিন্তু সেগুলোও যতটা সম্ভব কম সময়ের জন্য এবং ছোট ভৌগলিক এলাকায় রাখা সম্ভব হয় তা বিবেচনায় নিতে হবে বলে জানান তিনি। মাইক রায়ান বলেন, ‘ভাইরাসটি সম্পর্কে আমরা যতো বেশি জানতে পারবো, এটি নিয়ন্ত্রণে ততো বেশি সুনির্দিষ্ট হতে পারবো।’