মহাকাশ থেকে নির্বিঘ্নে সমুদ্রে ঝাঁপ!

ঝড়ের আশঙ্কা মাথায় নিয়েই মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফেরার ক্যাপসুলে উঠেছিলেন দুই মার্কিন নভোচারী। যদিও প্রকৃতি বিরূপ হয়নি। রবিবার চারটি প্যারাসুটে ভর করে নির্বিঘ্নেই মেক্সিকো উপসাগরে নেমে এলো স্পেসএক্স সংস্থার সেই ক্যাপসুল।  কলকাতাভিত্তিক আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে,  মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জনসন স্পেস সেন্টারের কন্ট্রোলরুম তখন হাততালিতে ফেটে পড়ছে। চারপাশ থেকে ছুটে আসছে স্পিডবোট। একটু পরেই জাহাজে তুলে নেওয়া হলো সেই ক্যাপসুলকে। 

noname

গত ৩০ মে মহাকাশ স্টেশনে পাড়ি দিয়েছিল স্পেসএক্স ক্রু ড্রাগন। ২০১১-এর পরে এই প্রথম আমেরিকার মাটি থেকে মহাকাশে রওনা দেওয়া। অভিযানের আর একটি বিশেষত্ব ছিল, প্রথম বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে মহাকাশ পাড়ি।

আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার মাস আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস)-এ কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরেছেন ডগলাস হার্লি এবং বব বেনকেন। ৪৫ বছর পরে এই প্রথম সমুদ্রে নামলো মার্কিন মহাকাশ-ক্যাপসুল। গতকাল পর্যন্ত দুই নভশ্চরের ফেরা ঘিরে অনিশ্চয়তা ছিল। কারণ, বাহামার দিক থেকে ধেয়ে আসছে ঝড় ‘ইসাইয়াস’। অশান্ত হচ্ছে সমুদ্র। অথচ ফ্লোরিডা উপকূলের কাছে সমুদ্রেই নামার কথা ‘স্পেসএক্স ক্রু ড্রাগন’ স্পেসক্রাফ্টের। খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে নভোচারীরা কীভাবে সমুদ্রে নামবেন, কীভাবে তাদের নিরাপদে উদ্ধার করা হবে, সব নিয়েই চিন্তায় ছিল নাসা। একবার শোনা গিয়েছিল ফেরার ‘টিকিট’ বাতিল করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দুদিন বাদে ফিরবেন তারা। তবে শেষমেশ আর তা করা হয়নি। মার্কিন সময় অনুযায়ী, সোমবার ভোরে রওনা দেয় যানটি।

মহাকাশ স্টেশনে দুই নভশ্চরের সম্মানে ‘বিদায়’ অনুষ্ঠান হয়। ‘নাসা টিভি’-তে দেখানো হয় সেই অনুষ্ঠান। হার্লি বলেন, ‘আর একটু পরেই যানে উঠবো, তারপর অবতরণ ও জলে ঝাঁপ।’ তিনি আরও বলেন, ‘দলের সবাই কঠোর পরিশ্রম করছেন। বিশেষ করে আবহাওয়ার যা গতিপ্রকৃতি।’ বেনকেনের কথায়, ‘অভিযানের সবচেয়ে কঠিন ধাপ উৎক্ষেপণ। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ নভশ্চরদের নিরাপদে ঘরে ফেরানো।’

নাসা টিভিতে দেখা যায়, বেনকেনের হাতে একটি খেলনা ডায়নোসর। বাবার সঙ্গে প্রিয় খেলনাটিকে মহাকাশে পাঠিয়েছিল বাচ্চারা। বেনকেন তার ও সঙ্গীর ছেলেমেয়েদের উদ্দেশে বলেন, ‘ট্রেমর, দ্য অ্যাপাটোসরাস এবার বাড়ি ফিরছে। বাবার সঙ্গেই ফিরছে।’

‘স্পেস শাটল’-গুলির মেয়াদ ফুরানোর পর থেকে মহাকাশে মানুষ পাঠাতে হলে রাশিয়ার সয়ুজ মহাকাশযানের ওপর নির্ভর করতে হত নাসাকে। তবে তা ব্যবহারের জন্য আসন-পিছু ৮ কোটি ডলার দিতে হতো আমেরিকাকে। এর জন্য দীর্ঘদিন তারা নতুন স্পেসক্রাফ্ট তৈরির চেষ্টায় ছিল। ‘স্পেসট্যাক্সি’ তৈরিতে স্পেসএক্স এবং উড়ান সংস্থা বোয়িংকে ৭০০ কোটি ডলার অর্থসাহায্য দিয়েছিল মার্কিন সরকার। গত বছর ব্যর্থ হয় বোয়িংয়ের প্রচেষ্টা। আশা-ভরসা ছিল স্পেসএক্স। বেনকেনদের নিরাপদে ঘরে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে সেই সাফল্যের খবর এলো।