লেবাননে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সহিংসতা, আহত অর্ধসহস্রাধিক

লেবাননে গত ৪ আগস্টের ভয়াবহ বিস্ফোরণের প্রতিবাদে দেশজুড়ে ব্যাপক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। শনিবার রাজধানী বৈরুতের রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে গুলির আওয়াজ আসতে থাকে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, বৈরুতে এদিনের সহিংসতায় অন্তত ৭২৮ জন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছে।noname

এক পর্যায়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢুকে পড়ে একদল বিক্ষোভকারী। এ সময় পার্লামেন্ট ভবনে অনুপ্রবেশ বন্ধে পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভাঙারও চেষ্টা চালানো হয়।

৪ আগস্টের ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণের জন্য সরকারের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করছে দেশটির মানুষ। রাজপথে নেমে সরকারের প্রতি তীব্র অনাস্থার জানান দিচ্ছে তারা। এরইমধ্যে আগামী ১০ বছরের জন্য লেবাননের কর্তৃত্ব ফ্রান্সের হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে একটি পিটিশন খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে এতে স্বাক্ষর করেছেন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। এতে লেবাননের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের জন্য দেশটির শাসকগোষ্ঠীকে দায়ী করে সংকট উত্তরণে ফ্রান্সের হাতে কর্তৃত্ব তুলে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

পিটিশনে বলা হয়েছে, লেবাননের কর্মকর্তারা স্পষ্টতই রাষ্ট্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও দেশ পরিচালনায় তাদের অক্ষমতা দেখিয়েছে। একটি ব্যর্থ ব্যবস্থা, দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ এবং মিলিশিয়া বাহিনী দেশকে শেষ করে দিচ্ছে। রাষ্ট্র ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।

এক সময় ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল লেবানন। এখন এই পিটিশনের উদ্যোক্তাদের বিশ্বাস, একটি পরিচ্ছন্ন ও টেকসই প্রশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য লেবাননকে ফের ফ্রান্সের অধীনে ফিরে যেতে হবে।

২০২০ সালের ৪ আগস্ট বিকালে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বন্দর এলাকায় জোড়া বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পুরো বৈরুত শহর ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠে। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, বৈরুতের বন্দর এলাকা থেকে বড় গম্বুজ আকারে ধোঁয়া উড়ছে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিকট বিস্ফোরণে গাড়ি ও স্থাপনা উড়ে যেতে দেখা যায়। সরকারি হিসাবে, বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫৮ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৫ হাজার মানুষ। ক্ষতি হয়েছে শত শত কোটি ডলারের। ঘটনার কারণ নির্ণয়ে তদন্ত কমিটিকে চার দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরক সামগ্রীর বিশাল মজুত থেকে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কর্মকর্তারাও একই রকমের তথ্য দিয়েছেন। তবে শুক্রবার এক বিবৃতিতে লেবাননের প্রেসিডেন্ট মাইকেল আউন বলেছেন, ‘ঘটনার কারণ এখনও জানা যায়নি। রকেট বা বোমা কিংবা অন্য কোনও ভাবে বাইরে থেকে হস্তক্ষেপের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।’

এর আগে সরকারিভাবে বলা হয়েছিল, গুদামে মজুত ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরিত হয়ে মারাত্মক ওই বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৩ সাল থেকে এসব রাসায়নিক অনিরাপদ অবস্থায় সেখানে মজুত ছিল।