জেরুজালেম ইসরায়েলের রাজধানী নয়: ইতালির আদালত

বলপূর্বক দখলকৃত ফিলিস্তিনের জেরুজালেম নগরীকে ইসরায়েল নিজের রাজধানী দাবি করলেও আন্তর্জাতিক আইনে তা বৈধ নয়। ফলে জেরুজালেম ইসরায়েলের রাজধানী নয়। এমন মত দিয়েছেন ইতালির একটি আদালত। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এ রায় দেন রোম কোর্ট হিসেবে পরিচিত ট্রাইব্যুনাল ডি রোমা। রবিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে মিডল ইস্ট মনিটর।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্লাভিও ইনসিন্না নামের ইতালির জনপ্রিয় একজন টেলিভিশন উপস্থাপকের অনুষ্ঠানে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে দেশটির দুইটি সংগঠন আদালতের শরণাপন্ন হয়। তাদের আবেদনের ভিত্তিতেই এ বিষয়ে অভিমত জানান বিচারক।

রায়ে আদালত বলেছেন, ওই অনুষ্ঠানের পরবর্তী পর্বে এটা উল্লেখ করতে হবে যে, ‘আন্তর্জাতিক আইনে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।’

মিডল ইস্ট মনিটর মনিটর জানিয়েছে, টেলিভিশনের ওই অনুষ্ঠানটি ছিল গত ২১ মে তারিখের। সেখানে একজন প্রতিযোগীর কাছে ইসরায়েলের রাজধানীর নাম জানতে চাওয়া হয়। উত্তরে তিনি ‘তেল আবিব’ বললে তার উত্তরকে ভুল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বলা হয়, সঠিক উত্তর হবে ‘জেরুজালেম’।

ইতালির পররাষ্ট্র নীতি আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় বিষয়টি নিয়েছে দেশটিতে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। ওই বিতর্ক শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়ায়।

১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ফিলিস্তিনের পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয় ইসরায়েল। এ শহরেই মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল আকসা মসজিদ অবস্থিত। মক্কা ও মদিনার পর এটি মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান। ১৯৮০ সালে পুরো জেরুজালেম দখল করে নেয় ইসরায়েল। শহরটিকে তারা ইহুদিবাদী রাষ্ট্রের ‘শাশ্বত এবং অবিভক্ত রাজধানী’ দাবি করতে থাকে। তবে এই দখলদারিত্বকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বীকৃতি দেয়নি। আন্তর্জাতিক আইনে ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে বলপূর্বক ইহুদি বসতি স্থাপনকে অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ বা শতাব্দীর সেরা চুক্তি নামের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক জেরুজালেম শহরকে ইসরায়েলি ভূখণ্ড হিসেবে দেখানো হয়েছে। আবু দিস নামের একটি ছোট গ্রামকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই পরিকল্পনায় জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরের অংশবিশেষ ও গাজা উপত্যকা নিয়ে নামমাত্র একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছে, যে রাষ্ট্রের নিজস্ব কোনও সেনাবাহিনী থাকবে না। তবে ট্রাম্পের কট্টর ইসরায়েল ঘেঁষা ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।