চারশ’ তালেবান বন্দিকে মুক্তি দেওয়া শুরু

দীর্ঘ বিলম্বিত শান্তি আলোচনার পথ সুগমের লক্ষে বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালেবানের প্রায় চারশ’ বন্দিকে মুক্তি দেওয়া শুরু করেছে আফগানিস্তান কর্তৃপক্ষ। দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জাভিদ ফয়সাল জানান, বৃহস্পতিবার ৮০ জন তালেবান বন্দির একটি দলকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে এসব বন্দি দুনিয়ার জন্য বিপদজনক বলে সতর্ক করেছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।বৃহস্পতিবার মুক্তি পায় ৮০ তালেবান বন্দি

দীর্ঘ ১৮ বছরের যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে শান্তির রোডম্যাপে সম্মত হয় তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্র। কাতারে অনুষ্ঠিত সংলাপে উভয়পক্ষ বাধ্যতামূলক নয় এমন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এতে বেসামরিক হতাহত বন্ধ এবং ইসলামি কাঠামোর মধ্যে নারী অধিকার সুরক্ষায় সম্মত হয় দুই পক্ষ। শান্তি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত আফগান সরকারের সঙ্গেও তালেবানদের আলোচনার শর্ত রাখা হয়। তবে এই আলোচনার আগে আত্মবিশ্বাস তৈরির উদ্দেশে বন্দি বিনিময়ের শর্ত দেয় উভয়পক্ষ।

তবে আফগান কর্তৃপক্ষ ও তালেবানদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও সহিংসতায় বিলম্বিত হয় দুই পক্ষের আলোচনা। নির্বাচন এগিয়ে আসায় বন্দি বিনিময়ের কাজ দ্রুত করতে আফগান সরকারের ওপর চাপ জোরালো করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর জেরেই এ সপ্তাহে তিন দিনের এক সম্মেলনে  চারশ’ তালেবানকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আফগানিস্তানের প্রথাগত আইনসভা লয়া জিরগা।

শুক্রবার আফগানিস্তানের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল কার্যালয়ের এক টুইট বার্তায় ৮০ তালেবান বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথা জানানো হয়। ওই বার্তায় বলা হয়, সরাসরি আলোচনা এবং দেশজুড়ে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি দ্রুত কার্যকর করতেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

তবে মুক্তি পেতে যাওয়া চারশ’ বন্দির অনেকেই মারাত্মক অপরাধে অভিযুক্ত বলে জানা গেছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র হাতে আসা একটি তালিকায় দেখা গেছে মুক্তি পেতে যাওয়া দেড়শ’রও বেশি তালেবান বন্দি মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় ছিল। এছাড়া এই তালিকার অন্তত ৪৪ বন্দিকে উদ্বেগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের। তারা বড় ধরণের হামলায় জড়িত ছিল বলে দাবি এসব দেশের।

আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি বৃহস্পতিবার সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এসব বন্দিকে মুক্তি দেওয়া সবার জন্যই বিপদজনক। তিনি বলেন, ‘শান্তির আকাঙ্ক্ষায় আমরা এসব বন্দিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হচ্ছি।’ ঘানি বলেন, ‘আমরা এখন বড় একটি মূল্য পরিশোধ করছি আর তা অর্থ হলো পরিণামে আমরা শান্তি পাবো।’

উল্লেখ্য, ২০০১ সালে মার্কিন আগ্রাসনে আফগানিস্তানে উৎখাত হয় তালেবান সরকার। তারপর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের সমর্থিত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। দীর্ঘ যুদ্ধ অবসানে ২০১৮ সালের জুনে কাতারে তালেবান বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা চূড়ান্ত হওয়ার আগে আফগান সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল তালেবান। কেননা, আফগান সরকারকে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পুতুল মনে করে। তালেবানের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশনার বাইরে কিছুই বলতে পারে না আফগান সরকার। ফলে তাদের সঙ্গে আলোচনা অর্থহীন। তবে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দুনিয়ার অনুরোধে তারা সরকারের সঙ্গে শর্ত সাপেক্ষে আলোচনায় সম্মত হয়।