লিবিয়ায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান রাশিয়ার

লিবিয়ায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। সোমবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ প্রায় এক দশকের সংঘাত বন্ধে যুদ্ধবিরতির এ আহ্বান জানিয়েছেন। মস্কো আলোচনার মাধ্যমেই সংঘাত নিরসন চায় বলেও জানান তিনি। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে তুর্কি সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহ।noname

২০২০ সালের ২১ আগস্ট লিবিয়ায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দেশটির বিবদমান দু’টি পক্ষ। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ফায়েজ সরাজ এবং রাশিয়া-আমিরাত সমর্থিত বিদ্রোহী নেতা খলিফা হাফতারের পূর্বাঞ্চলীয় পার্লামেন্টের স্পিকার অ্যাগুইলা সালে ইসা এ সংক্রান্ত সমঝোতায় উপনীত হন। তবে ওই সমঝোতার পরও খলিফা হাফতারের বাহিনীর হামলা অব্যাহত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত বন্ধ তথা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালো রাশিয়া।

এদিকে মস্কো প্রকাশ্যে যুদ্ধবিরতির কথা বললেও গত সপ্তাহে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাফতার বাহিনীর প্রতি রাশিয়ার পৃষ্ঠপোষকতা আগের চেয়ে আরও বেড়েছে।

রাশিয়া, মিসর, ফ্রান্স ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থিত হাফতার বাহিনী ইতোমধ্যে দেশটির পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত এলাকার দখল নিতে সমর্থ হয়েছে। সেখানে নিজস্ব স্টাইলে পার্লামেন্টও স্থাপন করা হয়েছে।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বহিঃশক্তির সমর্থন নিয়ে ত্রিপোলি দখলের চেষ্টা করে আসছিল হাফতার বাহিনী। তবে লিবিয়া সরকারের আমন্ত্রণে তুরস্ক এতে যুক্ত হওয়ার পরই পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করে। ক্রমেই পিছু হটতে থাকে  হাফতার বাহিনী। একপর্যায়ে মরিয়া হয়ে দেশটিতে হস্তক্ষেপের জন্য রাশিয়া, মিসর, ফ্রান্স ও আমিরাতের মতো দেশগুলোর শরণাপন্ন হন জেনারেল হাফতার।

জীবনযাপনের মানের দিকে থেকে তেলসমৃদ্ধ লিবিয়া একসময় আফ্রিকার শীর্ষে ছিল। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ছিল পুরোপুরি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তবে যে রাজনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা ওই ঐশ্বর্য নিশ্চিত করেছিল, সেটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় ২০১১ সালে যখন পশ্চিমা সমর্থিত বিদ্রোহীদের হাতে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হয়। তারপর থেকে লিবিয়ায় চলছে সীমাহীন সংঘাত।

গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হওয়ার পর ত্রিপোলিতে জাতিসংঘ সমর্থিত একটি মনোনীত সরকার রয়েছে। ওই কর্তৃপক্ষকে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার বা জিএনএ নামে অভিহিত করা হয়। তবে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে রয়ে গেছে। পশ্চিমাঞ্চলে জিএনএ-এর কর্তৃত্ব থাকলেও পূর্ব ও দক্ষিণের বেশিরভাগ অঞ্চল হাফতার বাহিনী এলএনএ-এর দখলে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে এই বাহিনী লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

প্রায় পাঁচ বছর ধরে লিবিয়ায় দুটি সরকার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এদের মধ্যে একটি সরকারকে সমর্থন দিয়েছে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশ। আরেকটি ফিল্ড মার্শাল হাফতারের নেতৃত্বাধীন। ত্রিপোলির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে জাতিসংঘ। তুরস্ক, ইতালি ও যুক্তরাজ্য এ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। আর হাফতার বাহিনীর সমর্থনে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়া, ফ্রান্স, মিসর ও সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে (জিএনএ) সমর্থন করে এবং শান্তি আলোচনার আহ্বান জানায়। কিন্তু ২০১৯ সালের এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খলিফা হাফতারকে ফোন দিয়ে লিবিয়ার ব্যাপারে ‘যৌথ স্বপ্নের’ কথা বলেন।