সৌদি জোটের সঙ্গে কাতারের বিরোধে মধ্যস্থতায় প্রস্তুত রাশিয়া: ল্যাভরভ

সৌদি জোটের সঙ্গে কাতারের বিরোধে মধ্যস্থতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, এ সংকটে মধ্যস্থতা করতে মস্কো প্রস্তুত রয়েছে। শুক্রবার রুশ সংবাদমাধ্যম স্পুটনিকের সঙ্গে আলাপকালে নিজ দেশের এমন অবস্থানের কথা জানান তিনি।সের্গেই ল্যাভরভ

সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, মিসরসহ জিসিসিভুক্ত দেশগুলো কাতারকে বয়কট করছে। তবে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছ থেকে প্রস্তাব পেলে যে কোনও বিবাদ নিরসনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে রাশিয়া প্রস্তুত। তবে আমাদের কাছে এখনও পর্যন্ত এমন কোনও প্রস্তাব আসেনি।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার দেশ সব দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক রক্ষা করে চেলে। উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিল (জিসিসি)-এর সদস্য দেশগুলোর জন্যও এটা প্রযোজ্য।

সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, মার্কিন প্রশাসন উপসাগরীয় অঞ্চলের বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে পুনর্মিলনের চেষ্টা করছে। তারা সৌদি জোটের সদস্য দেশগুলোকে কাতারের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে মস্কো অবহিত রয়েছে।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন সময়ে সৌদি-কাতার বিরোধে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিলেন যার কিছুদিন আগেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তার দেশ সৌদি জোটের কাতারবিরোধী অবরোধের অবসান চায়।

সম্প্রতি কাতারের উপপ্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠক শেষে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব মোকাবিলায় সৌদি জোটের সঙ্গে কাতারের বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। বিদ্যমান কাতারবিরোধী অবরোধের অবসান চায় ওয়াশিংটন। এ ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসন খুবই আগ্রহী।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইরানের ক্রমবর্ধমান হস্তক্ষেপ মোকাবিলায় উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যকার বিবাদের একটি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।

তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন চায় সৌদি জোটের সঙ্গে কাতারের বিরোধের অবসান ঘটুক। কাতারের আকাশ ও স্থল সীমান্ত আবারও হোক; যেটি বর্তমানে সৌদি জোটের অবরোধের মুখে রয়েছে। এ বিষয়টির সমাধানে আমি নজর দেবো।

এর আগে গত সপ্তাহেই কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি জোটের দীর্ঘ তিন বছরের অবরোধের পরিসমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দেয় ওয়াশিংটন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এ অবরোধ শেষ হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ সংক্রান্ত আলোচনায় এরইমধ্যে অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে নমনীয়তা দেখা গেছে।

এখন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় উভয় পক্ষের আলোচনার মধ্যেই নতুন করে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিলো রাশিয়া।

২০১৭ সালের ৫ জুন কথিত সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের অভিযোগ এনে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর। তবে সৌদি জোটের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে কাতার। বরং এ অবরোধকে রক্তপাতহীন যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মাদ বিন আব্দুররহমান আলে সানি। তার ভাষায়, সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন কয়েকটি আরব দেশ দোহার বিরুদ্ধে প্রকারান্তরে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

পরে অবরোধ প্রত্যাহারে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরে সৌদি জোট। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল আল জাজিরা টেলিভিশন বন্ধ করে দেওয়া, কাতার থেকে তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি প্রত্যাহার এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা। তবে সৌদি জোটের দাবি প্রত্যাখ্যান করে উল্টো রিয়াদের আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ তুরস্ক ও ইরানের দিকে আরও বেশি ঝুঁকে পড়ে কাতার। সূত্র: আল জাজিরা।