যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার জেরে বিক্ষোভ, দুই কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকির লুইভিলেতে কৃষ্ণাঙ্গ নারী ব্রেওনা টেইলর (২৬) হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ গঠনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে বিক্ষোভ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। অন্তর্বর্তীকালীন পুলিশ প্রধান রবার্ট স্ক্রোয়েডার সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।noname

রবার্ট স্ক্রোয়েডার জানান, দুই কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। তবে তাদের অবস্থা খুব গুরুতর নয়। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

২০২০ সালের ১৩ মার্চ রাতে নিজের ফ্ল্যাটে প্রেমিক কেনেথ ওয়াকারের সঙ্গে সিনেমা দেখার সময় দরজায় টোকার শব্দ পান ব্রেওনা। সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা ওই ফ্ল্যাটে মাদকবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়েছিল। পুলিশের দাবি, তাদের কাছে খবর ছিল ব্রেওনার সাবেক প্রেমিক, মাদক ব্যবসায়ী জামারকাস গ্লোভার এই ঠিকানা ব্যবহার করে বিভিন্ন প্যাকেজ আদান-প্রদান করে। গ্লোভারের নাম পুলিশের খাতায় থাকলেও ব্রেওনার কোনও ক্রিমিনাল রেকর্ড ছিল না । এক বিচারকের দেওয়া ‘নো নক’ পরোয়ানার ভিত্তিতে পুলিশ দরজা ভেঙে ব্রেওনার ফ্ল্যাটে অভিযানের চেষ্টা করে। গ্লোভার দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে এমনটা মনে করে ওয়াকার তার নিবন্ধিত বন্দুক দিয়ে গুলি চালালে এক পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে তাতে বিদ্ধ হয়ে ব্রেওনা হলওয়েতে লুটিয়ে পড়েন। তার শরীরে পাঁচটি গুলির ক্ষত পাওয়া গেছে।

এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে লুইভিলে টানা কয়েক মাস ধরেই তুমুল প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত পুলিশ সদস্যদের বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে বিক্ষোভকারীরা।

ওই হত্যাকাণ্ডের ছয় মাস এ ঘটনায় জড়িত তিন পুলিশ সদস্যের মধ্যে মাত্র একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজপথে নেমে আসে বিক্ষুব্ধ মানুষ। একটি বিক্ষোভের পাশেই বন্দুকের আওয়াজ পাওয়ার পর স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে কাউন্টিজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে লুইভিল ছাড়াও আটলান্টা, নিউ ইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া ও ওয়াশিংটনেও রাজপথে নেমে আসে আন্দোলনকারীরা।

স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছেন, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তার নাম ব্রেট হ্যানকিসন। সাবেক এই গোয়েন্দা দরজা-জানালায় এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করেছিলেন। অথচ পাশের অ্যাপার্টমেন্টেই সন্তানসম্ভবা নারী ও শিশুরা ছিল।

এফবিআই-এর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আরেক পুলিশ সদস্য মাইলস কসগ্রোভের গুলিতে টেইলর নিহত হয়েছেন। তবে তীব্র বিক্ষোভ সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ গঠন করা হয়নি। জন ম্যাটিংলি নামের আরে পুলিশ সদস্যও এ ঘটনায় যুক্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধেও কোনও অভিযোগ গঠন করা হয়নি।

অ্যাটর্নি জেনারেলের দাবি, ওই কর্মকর্তারা তাদের বলপ্রয়োগের ন্যায্যতা প্রমাণে সমর্থ হয়েছেন। কেননা টেইলরের বয়ফ্রেন্ডই প্রথম গুলিবর্ষণ করেছিল।

এমন পরিস্থিতিতেই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে রাজপথে নামে আন্দোলনকারীরা।