ইরাকে দূতাবাস বন্ধের হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের, বাড়ছে যুদ্ধের আশঙ্কা

বাগদাদ দূতাবাস বন্ধের হুমকি দেওয়ার সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ইরাক থেকে কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পাঁচ হাজার মার্কিন সেনা উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপ ইরাকে সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কাকে জোরালো করছে। ফলে ইরাকের নাগরিকেরা আশঙ্কা করছেন নতুন যুদ্ধের কবলে পড়তে যাচ্ছে তাদের দেশ। দুই ইরাকি কর্মকর্তা এবং দুই পশ্চিমা কূটনীতিকের বরাতে সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) এসব তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও

সম্প্রতি বাগদাদের গ্রিন জোনে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস সংলগ্ন এলাকায় রকেট এবং রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা বোমা হামলার ঘটনা বেড়েছে। ইরান এবং তেহরান সমর্থিত ইরাকি মিলিশিয়ারা এসব হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। হামলা ঠেকাতে না পারলে বাগদাদ দূতাবাস বন্ধের হুমকি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইরাক সরকারের দুই কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, সপ্তাহখানেক আগে প্রেসিডেন্ট বাহরাম সালিহকে ফোন করে এই হুমকি দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। বাগদাদ থেকে কূটনীতিক কর্মীদের সরিয়ে নিতে গত রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) থেকে প্রস্তুতি শুরু করেছে ওয়াশিংটন।

ইরাকি নাগরিকদের আশঙ্কা হলো কূটনীতিকদের সরিয়ে নেওয়ার পর দ্রুত সামরিক পদক্ষেপ জোরালো শুরু করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ হিসেবে তারা মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি রয়েছে। ওই নির্বাচনি প্রচারণায় ইরান ও তার সমর্থিত বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা বলে আসছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সেই আশঙ্কা থেকেই গত সপ্তাহে ইরাকের জনপ্রিয় শিয়া নেতা মুক্তাদা আল সদর বিবৃতি দিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলোর প্রতি উত্তেজনা এড়ানোর আহ্বান জানান। কয়েক লাখ ইরাকির নেতৃত্ব দেওয়া এই নেতা বলেন, ‘এমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না যাতে ইরাক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে।’

পশ্চিমা এক কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেন, ‘ইরান কিংবা ইরান সমর্থিত যোদ্ধাদের ইরাকে দুর্বল করার সুযোগ সীমিত করতে চাইছে না মার্কিন প্রশাসন।’ বাগদাদ থেকে কূটনীতিক প্রত্যাহারের পর ইরাকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক কিংবা অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিতে পারে কিনা জানতে চাইলে ওই কূটনীতিক জোরালো আশঙ্কার কথা জানান।

ইরাক থেকে কূটনীতিক প্রত্যাহারের বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের তরফে বলা হয়, ‘আমরা কখনোই বিদেশি নেতাদের সঙ্গে মন্ত্রীর ব্যক্তিগত আলোচনার বিষয়ে মন্তব্য করি না।...ইরান সমর্থিত গ্রুপগুলো আমাদের দূতাবাসে যে হামলা চালাচ্ছে তা কেবল আমাদের জন্য বিপদজনক নয় বরং ইরাক সরকারের জন্যও।’

উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যের সবগুলো দেশই ইরান কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকে রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিরল ব্যতিক্রম ইরাক: ওয়াশিংটন ও তেহরান উভয়ের সঙ্গেই নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে তাদের। আর সেকারণেই দেশটি দীর্ঘমেয়াদি ওয়াশিংটন-তেহরান ছায়াযুদ্ধ ক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

এ বছরের জানুয়ারিতে বাগদাদ বিমানবন্দরে ড্রোন হামলা চালিয়ে ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে যুক্তরাষ্ট্র হত্যা করে। জবাবে ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। তারপর অবশ্য ইরাকের ক্ষমতা নিয়েছেন নতুন এক প্রধানমন্ত্রী। তাকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে ইরাকের শক্তিশালী শিয়া মতালম্বী সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সঙ্গে এখনও নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলেছে তেহরান।