তুরস্কের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা চায় ফ্রান্স

তুরস্কের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা চায় জোটটির প্রভাবশালী সদস্য ফ্রান্স। গত অক্টোবরেই আঙ্কারার ওপর ইইউ নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল প্যারিস। তবে সে দফায় নিজ প্রস্তাবের পক্ষে ইউরোপীয় দেশগুলোর পর্যাপ্ত সমর্থন পায়নি ফ্রান্স। ফলে এবার আগামী ১০-১১ ডিসেম্বর ইইউ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে তুরস্কের বিরুদ্ধে কিছু অবরোধ-নিষেধাজ্ঞা আরোপে মরিয়া প্যারিস। কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

ফ্রান্স মরিয়া চেষ্টা চালালেও দেশটির পক্ষে একা ইইউ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সম্ভব নয়। এজন্য গ্রিস ও সাইপ্রাসের বাইরে অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর সমর্থনও নিশ্চিত করতে হবে।

গত অক্টোবরে তুরস্ককে ভূমধ্যসাগরে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম বন্ধ করার আহ্বান জানায় ইইউ নেতারা। অন্যথায় আঙ্কারাকে এর ফল ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। প্যারিস বলছে, ইইউ নেতাদের ওই হুঁশিয়ারি কানে নেয়নি এরদোয়ান প্রশাসন। ফলে এখন ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে।

তুরস্কের সামরিক পৃষ্ঠপোষকতায় সম্প্রতি কারাবাখ যুদ্ধে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের সাফল্য পায় আজারবাইজান। বহু বছর পর নিজ দেশের ভূখণ্ড কারাবাখ পুনরুদ্ধারে সফল হয় আজেরি বাহিনী। কারাবাখ যুদ্ধে আর্মেনিয়ার পক্ষ নিয়েছিল ফ্রান্স। তবে শেষ পর্যন্ত আজেরি ফৌজের জয় স্বভাবতই প্যারিসের জন্য সুখকর ছিল না। লিবিয়াতেও বিদ্রোহী গোষ্ঠী হাফতার বাহিনীকে সমর্থন দিয়ে আসছে ফ্রান্স ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে সেখানেও তুরস্কের সমর্থন নিয়ে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে দেশটির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জাতীয় ঐকমত্যের সরকার। ফ্রান্সে মহানবী (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের ঘটনায় তুরস্ক ও ফ্রান্সের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা নতুন রূপ নেয়। ফরাসি প্রেসিডেন্ট মহানবী (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিলে তার তীব্র সমালোচনা করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। এরদোয়ান বলেন, ইসলামের প্রতি এমন মানসিকতার জন্য ম্যাক্রোঁর মানসিক চিকিৎসা দরকার। সব মিলিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুই দেশের সম্পর্কে উত্তাপ বিরাজ করছে।

সম্প্রতি এরদোয়ানের তার্কিশ সাইপ্রিয়ট সফর নিয়ে ক্ষুব্ধ ইউরোপীয় নেতারা। ওই সফরে সাইপ্রাসে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের তাগিদ দেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট।

ফরাসি পার্লামেন্টের এক শুনানিতে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন ইভেস লে দ্রিয়ান বলেছেন, তুরস্ক জানে তার কী করা উচিত। তারা সংঘাতে জড়াবে নাকি সহযোগিতার পথে হাঁটবে এটি তাদের ওপর নির্ভর করে।

আগামী ১০-১১ ডিসেম্বর ইইউ নেতাদের বৈঠকে গ্রিস ও সাইপ্রাসের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে তুরস্কের বিবাদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা করা হবে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈঠকে আঙ্কারার ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সমালোচনা করেছে তুরস্ক। তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এ ধরনের বিতর্ক কারও জন্যই সহায়ক নয়।

ফ্রান্সের পক্ষ থেকে তুরস্কের বিরুদ্ধে বিশদ নিষেধাজ্ঞার কোনও রূপরেখা এখনও পাওয়া যায়নি। তবে কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ভূমধ্যসাগরে আঙ্কারার অনুসন্ধান কার্যক্রম সীমিত করার লক্ষ্যে ইইউ কোনও ব্যবস্থা নিলে তুরস্কের অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে শেষ পর্যন্ত এ বৈঠকে আঙ্কারার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে ফ্রান্স ইউরোপীয় নেতাদের কতটা রাজি করাতে পারে সেটা সময়ই বলে দেবে।