ইরানি বিজ্ঞানীকে হত্যা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড: তুরস্ক

ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদে হত্যাকাণ্ডকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করেছে তুরস্ক। একইসঙ্গে এর পেছনে যারাই থাকুক তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে আঙ্কারা। তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে নিজ দেশের এমন অবস্থানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি।noname

তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে মোহসেন ফাখরিজাদে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়। এছাড়া ইরানের সরকার ও নিহতের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়েছে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে ওই অঞ্চলে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে নজর রাখারও আহ্বান জানিয়েছে তুরস্ক। সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।

ইরানের নেতারা বলছেন, তাদের বিশ্বাস ইসরায়েল এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তবে এর প্রতিশোধ ‘তেহরান যখন সঠিক সময় এসেছে বলে মনে করবে তখনই’ নেওয়া হবে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, হঠকারী কোনও কিছু করা হবে না। প্রতিশোধ নেওয়ার সময়টা ইরান নিজেই বেছে নেবে।

এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, ইরানের মাটিতে আক্রমণ চালিয়ে এত গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিকে হত্যা করে দেশটির শত্রুরা এক বিরাট এবং অপমানজনক আঘাত হেনেছে।

শুক্রবারের হত্যাকাণ্ডটি নতুন কিছু নয়। এর আগেও চার জন ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। সেগুলোর জন্যও ইরান ইসরায়েলকেই দায়ী করেছে। এখন যে প্রশ্ন সবার মনে আসবে তা হলো, তেহরান কীভাবে এর পাল্টা জবাব দেবে? কখন দেবে? ইরানের সামরিক বাহিনী বলেছে, ‘বজ্রের মতো আঘাত হেনে’ প্রতিশোধ নেওয়া হবে।

প্রতিশোধের দাবিতে তেহরানের রাস্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিক্ষোভ করেছে। একজন বিক্ষোভকারী সেখানে বলেছেন, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ক্ষমতার শেষ দুই মাসে একটা 'যুদ্ধ পরিস্থিতি' তৈরি করতে চাইছেন।

ইরানের বাস্তববাদী প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির কথাগুলো ছিল অবশ্য অনেক মেপে মেপে, হিসাব করে বলা। তিনি বলছেন, প্রতিশোধ নেওয়া হবে ঠিকই। কিন্তু হয়তো এক্ষুণি তা হবে না।

ইসরায়েলের দিকে ইঙ্গিত করে রুহানি বলেন, ‘ইরান যথাসময়ে ব্যবস্থা নেবে, ফাঁদে পা দেবে না। তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু আমরা তাদের হাতে কি তাস আছে তা বুঝে ফেলেছি। তারা সফল হবে না। কারণ, ইরান জানে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের সঙ্গে সংঘাত নয় বরং সংলাপ চান।’ প্রশ্নটা সেখানেই। ইরান কেন এখনই কোনও পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছে না?

ইসরায়েল আর যুক্তরাষ্ট্র মিলে একটা ফাঁদ পেতেছে?

বিবিসির বিশ্লেষক ও ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সম্পাদক এ্যালান জনস্টন বলছেন, এই সতর্কতার কারণ হলো, রুহানি মনে করেন যে ইসরায়েলের কট্টর যুদ্ধবাজরা এবং যুক্তরাষ্ট্র মিলে ইরানের জন্য একটা ফাঁদ পেতেছে।

এলান জনস্টন বলেন, ‘তারা (ইসরায়েল ও ট্রাম্প প্রশাসন) চাইছে, ইরান একটা ভুল পদক্ষেপ নিয়ে বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ুক।’

জনস্টন বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদের শেষ কয়েকটি সপ্তাহ চলছে এখন। এই সময়টাতে সম্ভবত রুহানি বড় ধরনের কোনও সংঘাত এড়াতে চাইছেন।