ইসরায়েলকে আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি সৌদির

ইসরায়েলকে নিজ দেশের আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে সৌদি আরব। সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী ইসরায়েলের বাণিজ্যিক ফ্লাইটগুলোকে এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইহুদি জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে সৌদি কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর এ অনুমোদন দেয় রিয়াদ। সূত্রের বরাত দিয়ে সোমবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

এ অনুমতির ফলে এখন থেকে ইসরায়েল-আমিরাত রুটে নিয়মিতভাবে সৌদি আকাশসীমা ব্যবহারের সুযোগ পাবে ইসরায়েল। সোমবার ট্রাম্প প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এ ইস্যুতে আমরা তাদের সম্মত করতে সমর্থ হয়েছি।

মঙ্গলবার সকালে আমিরাতের উদ্দেশ্যে ইসরায়েলের প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট ছাড়ার কথা রয়েছে। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই সৌদি আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি পায় দেশটি। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

হোয়াইট হাউজের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ইসরায়েলি বিমান সংস্থাগুলো যেন সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনে যাত্রী পরিবহন করতে পারে সেটির ব্যবস্থা করা উচিত।

সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার পর থেকেই গুঞ্জন চলছে; সৌদি আরবও একই ধারবাহিকতা রক্ষা করতে যাচ্ছে কিনা। সম্প্রতি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গোপন বৈঠকের খবর সামনে আসার পর সেই গুঞ্জন জোরালো হয়েছে। তবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদন বলছে, আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের আগে ইসরায়েল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি করে নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করতে পারে রিয়াদ। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনেও একই ধরনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এক সময় মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে দখলদার শক্তি হিসেবে বিবেচিত হওয়া ইসরায়েলের সঙ্গে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে উপনীত হয় আমিরাত ও বাহরাইন। ইসরায়েলের জন্মলগ্ন থেকেই বেশিরভাগ আরব রাষ্ট্র এটিকে একটি দখলদার শক্তি হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। ফলে স্বভাবতই এতোদিন ধরে ইসরায়েলকে বয়কট করে আসছিল তারা। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদিসহ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের নাটকীয় উন্নতির খবর এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী দ্য আটলান্টিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান স্পষ্ট ভাষায় বলেন, বহু বিষয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। একইসঙ্গে তিনি মার্কিন নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড দখল করে জন্ম নেওয়া ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বের অধিকারের পক্ষে নিজের অবস্থানের কথা জানান। এর দুই বছরের মাথায় রিয়াদের দুই মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে।

দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলমুখী বা ইসরায়েল থেকে ছেড়ে যাওয়া বিমানগুলোকে সৌদি আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রিয়াদের এ নীতির পরিবর্তন হয়েছে। আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সৌদি আকাশসীমা হয়ে বাহরাইনে পৌঁছায় ইসরায়েলি প্রতিনিধি দলকে বহনকারী ফ্লাইট। এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন, অচিরেই বাহরাইন ও আমিরাতের পথে হাঁটবে রিয়াদ।