ফাইজারের ভ্যাকসিন কি নিরাপদ ও কার্যকর?

ফাইজার ও বায়োএনটেক উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা প্রথম দেশ হিসেবে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য। আগামী সপ্তাহে ভ্যাকসিনটি চালু হবে। কোম্পানিটির দাবি পরীক্ষার চূড়ান্ত ধাপে ভ্যাকসিনটি মানুষকে করোনা সংক্রমণ থেকে ৯৫ শতাংশ রক্ষা করতে সক্ষম। এই ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের রয়েছে প্রবল আগ্রহ ও বহু প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যম স্কাই নিউজ।noname

ভ্যাকসিনটি খুব দ্রুত উদ্ভাবন করা হয়েছে, এটি কি নিরাপদ?

এটা মাত্র কয়েক মাসেরই বিষয়, তবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন মানুষকে আবারও আশ্বস্ত করা প্রয়োজন যে ভ্যাকসিনটি যত দ্রুতই উদ্ভাবন করা হোক না কেন তার ওপর এটি নিরাপদ কিনা তা নির্ভর করে না।

ফাইজার অ্যান্ড বায়োএনটেক বলছে পরীক্ষা থেকে ভ্যাকসিনটি নিয়ে মারাত্মক কোনও নিরাপত্তা উদ্বেগ দেখা যায়নি। নিরাপত্তার উদ্দেশে যে কোনও ভ্যাকসিন পরীক্ষার মতোই এই ভ্যাকসিনটিও একই সময়ের মধ্যে একই সংখ্যক (প্রায় ৪৫ হাজার) মানুষের ওপর পরীক্ষা করানো হয়েছে।

ভ্যাকসিন কনফিডেন্স প্রজেক্ট-এর পরিচালক প্রফেসর হেইডি লারসন বলেছেন, দক্ষতার মাধ্যমে পরীক্ষার সময় যে পরিমাণ কমিয়ে আনা হয়েছে তা আগে কখনও দেখা যায়নি।

ইবোলা সংকটের পর কোভিড-১৯’র মতো জরুরি পরিস্থিতির জন্য জরুরি অর্থায়ন মেকানিজম প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর মাধ্যমে অন্য যেকোনও সময়ের চেয়ে দ্রুত অর্থ বরাদ্দ সম্ভব হয়।

এমআরএনএ-সহ নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারও দ্রুত পরীক্ষা সম্পন্ন করতে ভূমিকা রেখেছে। ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনও এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছে। প্রফেসর লারসন বলেন, ‘নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়া এখনও রয়েছে কিন্তু সময়সীমা নির্দিষ্ট করা আছে তবে সেটি সংক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে, আর তা কেবল বহু জিনিস অনুমোদনের নামেই নয়।’

আরএনএ কী এবং এই ধরনের ভ্যাকসিন কি মানুষের জেনেটিক কোড আক্রান্ত করতে পারে?

আরএনএ এক ধরনের নিউক্লিক এসিড, যা ডিএনএ’কে প্রোটিনে রুপান্তর করে। এটি কোভিড-১৯ ভাইরাসের জেনেটিক তথ্য বহন করে।

গত কয়েক বছরে এমআরএনএ (মেসেনজার আরএনএ) ভ্যাকসিন একটি সম্ভাবনা হয়ে উঠেছে। আর প্রথাগত ভ্যাকসিনে ভাইরাস দুর্বল করার প্রক্রিয়া ব্যবহার হয়। অন্যদিকে আরএনএ ভ্যাকসিনে কেবল প্যাথোজেন জেনেটিক কোড ব্যবহার হয়েছে। এগুলোতে এমআরএনএ সিকোয়েন্স প্রবর্তন করা হয়েছে যা মানুষের নিজস্ব কোষে ভ্যাকসিনের অ্যান্টিজেন ও প্রতিরোধক প্রতিক্রিয়া উৎপন্ন করবে।

প্রফেসর লারসন বলেন, ‘এটা আপনার ডিএনএ বদলে দেবে না, এটি ভাইরাসের আচরণ বদলে দেবে আপনার ডিএনএ নয়।’

প্রথাগত ভ্যাকসিনের চেয়ে আরএনএ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এটি আরও দ্রুত এবং কম মূল্যে উদ্ভাবন করার সুযোগ রয়েছে।

ভ্যাকসিন কী বাধ্যতামূলক?

না। ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন সরকার এটা করার প্রস্তাব দেবে না।

তবে প্রফেসর লারসন বলেন, ‘স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো যেখানে মানুষ সবচেয়ে দুর্বল রোগীদের সঙ্গে কাজ করার ঝুঁকি রয়েছে সেখানে এটি বাধ্যতামূলক করা দেখতে চাইবো।’

ফাইজার/বায়োএনটেকের কার্যকারিতা কেমন?

স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়া থেকে মানুষকে রুখতে ভ্যাকসিনটি ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের জন্য ন্যুনতম ৫০ শতাংশ কার্যকারিতা গ্রহণযোগ্য। ফলে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা আরও অনেক বেশি।

ফাইজার ও বায়োএনটেকের পরীক্ষা এখনও শেষ হয়নি। ফলে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর এটির কার্যকারিতা খানিক কমে যেতে পারে। তবে বিজ্ঞানীরা এখনও একমত যে এটি ৫০ শতাংশের বেশি কার্যকর থাকবে।

উল্লেখ্য, ফ্লু ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ আর হামের দুই ডোজ টিকার কার্যকারিতা ৯৭ শতাংশ।

কতোদিন পর্যন্ত ভ্যাকসিন প্রতিরোধ ক্ষমতা দেবে?

শেষ ধাপের পরীক্ষা গত ২৭ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে। ফলে কতোদিন পর্যন্ত এটি প্রতিরোধক্ষম থাকবে তা বলার জন্য এখনও যথেষ্ট সময় আসেনি।

এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলোজি অ্যান্ড সংক্রামক রোগের প্রফেসর ইলিয়ানর রিলে বলেন, ‘আমরা আক্রান্তের তীব্রতা সম্পর্কে এখনও বেশি কিছু জানি না। তবে সতর্কভাবে আশাবাদী হওয়ার কারণ রয়েছে বলে মনে করি।’