তুষারপাতে বিপাকে বসনিয়ার অভিবাসনপ্রত্যাশীরা

শীত যত বাড়ছিল, দুর্ভোগ ততটাই বাড়ার শঙ্কা ছিল অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে। শীত মৌসুমের প্রথম তুষারপাত সেই দুর্দশা বাড়িয়ে দিলো আরও কয়েক গুণ। ভেলিকা ক্লাদুসার জঙ্গল থেকে ডয়চে ভেলে যখন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে, তখন শীতের হাত থেকে বাঁচতে হিমশিম খাচ্ছিল তারা। বাইরের ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে পলিথিনের তৈরি অস্থায়ী ঘর তৈরি করেছেন তারা। কিন্তু সেটির ভেতরেও সহজেই জমে কুয়াশার ফোঁটা।22

আশপাশ থেকে সংগ্রহ করা লাকড়ি দিয়েই রান্না ও শরীর গরম রাখার চেষ্টা করছিলেন অনেকে। কিন্তু তাদের রসদও ফুরিয়ে আসছিল দ্রুতই।

বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, তুষারপাতের মধ্যেও বেশ কিছু অভিবাসনপ্রত্যাশী সেই পলিথিনের অস্থায়ী ঘরগুলোতেই বাস করছেন।

অনেক ক্ষেত্রেই পলিথিনের তাঁবুর ওপর বরফ জমে তা বাঁকা হয়ে যাচ্ছে, ভেঙেও পড়ছে। উলের তৈরি টুপি, গরম পোশাক ও রেইনকোট পরে শীত মোকাবিলার চেষ্টা করছেন তারা। তবে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার তুলনায় এসব ব্যবস্থা একেবারেই অপ্রতুল।

বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ৩০ বছরের শাহীন এপি-কে বলেন, ‘এখন প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, গত রাতে খুব সমস্যায় পড়েছিলাম। আমাদের কোথাও ঘুমানোরও জায়গা নেই।’

তুষারপাতের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। অনেকে নিজেদের একমাত্র গরম কাপড় ধুয়ে শুকানোর জন্য ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। বরফ পড়ে মুহূর্তেই জামা-কাপড়-জুতা এমনকি অনেকের রাতের একমাত্র সম্বল কম্বলও ভিজে যায়।

২২ বছরের আহমেদ জানান, তিনি কোথাও থাকার জায়গা পাচ্ছেন না। পরিস্থিতি দিন দিন টিকে থাকার জন্য ‘অসম্ভব’ হয়ে পড়ছে বলেও জানান তিনি।

১৯৯০-এর দশকে যুদ্ধের পর থেকে এখনও অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বসনিয়া। ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশটি ইউরোপ মহাদেশের অন্যতম দরিদ্র রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। তার ওপর হাজার হাজার অভিবাসীর চাপ দেশটিকে আরও বিপদে ফেলেছে।

বসনিয়ার রাজনীতিবিদরা একমত হতে না পারায় সংকট মোকাবিলায় সঠিক পদক্ষেপও গ্রহণ করতে পারছে না দেশটির সরকার।

অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কেউই বসনিয়ায় থাকতে চান না। তাদের লক্ষ্য সীমান্তের ওপাড়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ ক্রোয়েশিয়া গিয়ে সেখান থেকে ফ্রান্স, ইতালি ও জার্মানির মতো অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলোতে যাওয়া।

ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে ব্যাপক কড়াকড়ির মধ্যে অবৈধভাবে পাড়ি দিতে গিয়ে ধরা পড়েন বেশিরভাগ অভিবাসনপ্রত্যাশী। তাদের ক্রোয়েশিয়া বা স্লোভেনিয়া থেকে বসনিয়ায় ফেরত পাঠানোর সময় নির্যাতন করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ক্রোয়েশিয়া পুলিশের বিরুদ্ধে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ বারবার উঠলেও এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সূত্র: ডিডব্লিউ।