শ্রদ্ধাভরে বঙ্গবন্ধু আর তার সফরকে স্মরণ করলো লন্ডন

পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সদ্য স্বাধীন দেশে ফেরার আগে যুক্তরাজ্য সফর করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালের সেই দিনটি ছিল ৮ জানুয়ারি। শুক্রবার (এ বছরের ৮ জানুয়ারি) ঐতিহাসিক সেই দিনটিকে স্মরণ করেছে লন্ডন। এদিন যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি দূতাবাসের উদ্যোগে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে ব্রিটিশ সরকারের মিনিস্টার ও বিরোধীদলীয় নেতাদের পাশাপাশি ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও হাউজ অব লর্ডসের কয়েকজন সদস্য, রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা অংশ নেন। তারা বলেন, ওই লন্ডন সফর থেকেই বাংলাদেশের বৈশ্বিক কূটনীতির ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথাও স্মরণ করেন বক্তারা।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি ভোরে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার। মুক্তির পর প্রথমে তিনি ব্রিটেনে যান। সেখান থেকে ব্রিটিশ বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে ১০ জানুয়ারি ভারত হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছান। বঙ্গবন্ধুর ব্রিটেনে যাওয়ার সেই দিনটিকে স্মরণ করে শুক্রবার যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু ও ব্রিটেন: ঐতিহাসিক ৮ জানুয়ারি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে ফেরার আগে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু লন্ডনে যাত্রাবিরতি করেন এবং তখনকার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার এডওয়ার্ড হিথ এবং বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা স্যার হ্যারল্ড উইলসনের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন।

সে বৈঠককে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ সরকার এবং বিরোধী দলে থাকা লেবার পার্টির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর অকুণ্ঠ বন্ধুত্ব এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য তার নিঃশর্ত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করেন মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, স্যার এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সে বৈঠকেই বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য দৃঢ় বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল, আর গত ৫০ বছরে তা আরও মজবুত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বঙ্গবন্ধুর সেই সফরের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশকে যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতি প্রদানের দুয়ার খুলে দিয়েছিল। তার সূত্র ধরেই ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়।

যুক্তরাজ্যের ফরেইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের দক্ষিণ এশিয়া ও কমনওয়েলথ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড তারিক আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু কেবল বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্যই অনুপ্রেরণা নন, স্বাধীনতা আর গণতন্ত্রের জন্য যারা লড়াই করে চলেছেন, তাদের অনেকের জন্যও অনুপ্রেরণা তৈরি করেছেন। প্রথম যুক্তরাজ্য সফরের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে দৃঢ় অংশীদারিত্ব আর গভীর বন্ধুত্বের যে ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, গত পাঁচ দশক ধরে তার সুফল ভোগ করছে দুই দেশ।

আলোচনা শেষে যৌথভাবে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু লাইব্রেরি উদ্বোধন করেন ড. মোমেন ও লর্ড তারিক।