চীনে পাঁচ মাসের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ করোনা শনাক্ত

চীনে গত পাঁচ মাসেরও বেশি সময়ের মধ্যে রবিবার একদিনে সর্বোচ্চ করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সোমবার দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। বিশেষ করে রাজধানী বেইজিং সংলগ্ন হেবেই প্রদেশে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারস জানিয়েছে, চীনে নতুন করে আরও ১০৩ জনের শরীরে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর আগে গত ৩০ জুলাই সর্বোচ্চ ১২৭ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। এরপর থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি পরিলক্ষিত হলেও রবিবার নতুন করে শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হওয়ায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, নতুন করে সংক্রমণ শুরুর পর সোমবার উত্তর-পূর্ব হিলংজিয়াং প্রদেশের একটি কাউন্টিতে লকডাউন কার্যকর হয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনেও এ খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।

জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন (এনএইচসি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রবিবার স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত ৮৫ জনের মধ্যে হেবেই প্রদেশেই ৮২ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। লিয়াওনিং প্রদেশে দুই জন এবং রাজধানী বেইজিং-এ একজনের শরীরে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর বাইরে শনাক্ত হওয়া আরও ১৮ জন সম্প্রতি বিদেশ থেকে এসেছিলেন।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। এক পর্যায়ে উৎপত্তিস্থল চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তবে আশার কথা হচ্ছে, এখন আক্রান্তের পর সুস্থ হওয়ার হার দ্রুত বাড়ছে। এরইমধ্যে করোনার টিকাও আবিষ্কৃত হয়েছে।

চীনের সরকারি হিসেবে দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৮৭ হাজার ৫৩৬। এর মধ্যে চার হাজার ৬৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও দেশটির বিরুদ্ধে প্রকৃত পরিস্থিতি গোপন করার অভিযোগ রয়েছে। উহানের একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, ‘বুদ্ধি-বিবেচনাসম্পন্ন যেকোনও মানুষ এই সংখ্যা (সরকারি পরিসংখ্যান) নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করবেন।’

মহামারির শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে আসছিল, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পেছনে চীনের ভূমিকা রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সেই দাবিকে আরও জোরালো করে চীনের উহানের ল্যাবের এক ভাইরোলজিস্ট লি মেং ইয়ানের বক্তব্য। লি মেং ইয়ান বলেন, চীনের ল্যাবেই তৈরি করা হয়েছে করোনাভাইরাস। এটি মানুষের তৈরি বলে তার কাছে শতভাগ প্রমাণ রয়েছে।

হংকংয়ে জন্ম নেওয়া ভাইরোলজিস্ট লি মেং ইয়ান পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। বছরের শুরুতে তাকে চীন হত্যা করতে চেয়েছিল বলে ভয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান তিনি। তিনি জানান, চীনের পূর্বাঞ্চলে গত বছরের শেষ দিকে নিউমোনিয়ার মতো এই রোগ নিয়ে প্রথম দিকে গবেষণাকারীদের একজন ছিলেন তিনি। কিন্তু যখন রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে তখন তাকে নীরব ও সতর্ক থাকতে বলা হয়। তার সুপারভাইজার তাকে বলেন, আমরা সমস্যায় পড়বো এবং গুম হয়ে যাবো।

উহান শহরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে খবর প্রকাশের জেরে গ্রেফতার হওয়া চীনা সাংবাদিক ঝ্যাং ঝানকেও চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ৩৭ বছরের ঝ্যাং ঝান ২০২০ সালের মে মাসে গ্রেফতার হন। বিবাদ সৃষ্টি ও ঝামেলায় উসকানি দেওয়ার দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।