‘ভেবেছিলাম নতুন বছরটা আর দেখা হবে না...’

বর্ষবরণের ঘণ্টাখানেক আগে দুবাইয়ের সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডকে জানত এভাবেই শুরু হবে বছরটা! এমন এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা দিয়ে, যা সারা জীবন মনে থেকে যাবে। বিধ্বংসী আগুন তখন তার কাছ থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের দূরত্বে। বাঁচার আশায় কোমরে দড়ি বেঁধে ব্যালকনি দিয়ে ঝুলে রয়েছেন তিনি। উদ্ধারকারী দলের চেষ্টায় আগুনের গ্রাস হওয়া থেকে রক্ষা পেলেন বটে। তবে ঝলসে গেছে তার ভেতরটা। এই বুঝি শ্বাসরোধে প্রাণ গেল। সেই রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে এখনও কেঁপে কেঁপে উঠেন তিনি।
নতুন বছর শুরু হতে তখন আরও কিছুটা সময় বাকি। বুর্জ খালিফার পাশের অ্যাড্রেস হোটেলে যখন আগুন লেগেছে তখন তিনি ওই ভবনের ৪৮ তলায় দাঁড়িয়ে। অপেক্ষা করছিলেন নতুন বছরের আনন্দকে ক্যামেরাবন্দি করার জন্য। পেশাগত তাগিদে। সঙ্গে ছিল এক বন্ধু। দু’জনই সাংবাদিক। নতুন বছরে বুর্জ খালিফাকে ঘিরে যে আলো আর উৎসবের বন্যা হওয়ার কথা, সেটাই ক্যামেরাবন্দি করতে গিয়েছিলেন দু’জনে।
অ্যাড্রেস হোটেলের ৪৮ তলার জানলার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে তখন দারুণ ব্যস্ত তিনি। কখন যে নিচ থেকে চুপিসারে বিধ্বংসী আগুন ছুটে এসেছে, একবারের জন্যও টের পাননি তিনি। বন্ধুই প্রথম দেখতে পান। আর দেখেই চিৎকার করে সাবধান করেন তাকে। বন্ধু ছুটে বেরিয়ে গেলেও আটকা পড়েন তিনি। ততক্ষণে ধোঁয়ার কুণ্ডলী ঘরের ভেতরে প্রবেশ করেছে। উপায় না দেখে নেমে পড়েন ব্যালকনিতে। বুঝেছিলেন এতে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশ কম। কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘর ছাড়িয়ে সেই আগুন ব্যালকনিতেও এসে পড়বে। পাশেই ঝুলছিল শক্তপোক্ত দড়ি। সেই দড়ি কোমরে বেঁধে ঝুলে পড়েন তিনি। এই দড়ির সাহায্যেই ওই বহুতল ভবনটিতে  বাইরে থেকে পরিষ্কারের কাজ করেন কর্মীরা।
এরপর... প্রতিটা মুহূর্ত তার কাছে কয়েক ঘণ্টার মতো কাটছিল। চিৎকার করছিলেন। কিন্তু শুনবে কে? একঘণ্টা এভাবেই ঝুলেছিলেন তিনি। ভেবেই নিয়েছিলেন নতুন বছরের সকালটা তার আর দেখা হবে না। তাই চোখ বন্ধ করে শুধু প্রিয়জনদের কথাই ভাবছিলেন। কখন যে উদ্ধারকীরা দল এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। মনে ছিল না সে কথাও। জ্ঞান যথন ফিরল তখন হাসপাতালে। চারিদিকে তখন সাংবাদিকদের ভিড়। সূত্র: এনডিটিভি, আনন্দবাজার।

/এমপি/বিএ/