‘বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হলেও যৌথ সম্মতির যৌন সম্পর্ক ধর্ষণ নয়’

বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সহবাসের পর পুরুষ কিংবা নারী যদি বিয়ে করতে অস্বীকৃতিও জানায়, তারপরও তাকে ধর্ষণ বিবেচনা করা যাবে না বলে রায় দিয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। কলকাতাভিত্তিক আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, দীর্ঘদিন একসঙ্গে বসবাস করা ২ কল সেন্টার কর্মীর মামলার প্রেক্ষিতে সোমবার এই আদেশ দেওয়া হয়।

মামলার সূত্রে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, একে অন্যকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করতেন ২ কল সেন্টার কর্মী। প্রায় ৫ বছর ধরে একসঙ্গে থাকার পর তাদের মধ্যে টানাপড়েন তৈরি হয় এবং সম্পর্ক ভেঙে যায়। পরবর্তীকালে ওই তরুণ অন্য এক তরুণীকে বিয়ে করেন। তবে সহবাসে  থাকা আগের তরুণী তার বিরুদ্ধে ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ’ সংক্রান্ত মামলা দায়ের করেন।

সেই মামলার শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি বোবদে, বিচারপতি এ এস বোপান্না এবং ভি রামাসুব্রহ্মণিয়নের বেঞ্চে। বিচারপতিদের বক্তব্য, ‘‘বিয়ের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া ঠিক নয়। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করা উচিত নয় কোনও নারীরও। তবে তার অর্থ এই নয় যে, দীর্ঘদিন ধরে সহবাস এবং সহমতের ভিত্তিতে যৌন মিলনকে ধর্ষণ বলে দেগে দেওয়া যায়।’

ওই তরুণের আইনজীবী বিভা দত্ত মাখিজা আদালতে যুক্তি দেন, সহমতের ভিত্তিতে যৌন সম্পর্ককে যদি ধর্ষণ হিসেবে ধরা হয়, এবং তার জেরে কেউ গ্রেফতার হন, সেটা বিপজ্জনক প্রবণতা হয়ে উঠতে পারে। উল্টো দিকে অভিযোগকারিণীর আইনজীবী আদিত্য বশিষ্ঠের পাল্টা যুক্তি, ওই তরুণ গোটা বিশ্বের সামনে ঘোষণা করেছেন তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকছেন এবং একটি মন্দিরে বিয়ে করেছেন। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন এবং তার মক্কেলকে শারীরিক নিগ্রহ ও আর্থিক শোষণ করেছেন।

সওয়াল-জবাব শেষে ওই যুবককে ৮ সপ্তাহের জন্য গ্রেফতারিতে সুরক্ষাকবচ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। ২০১৮ সালে এই ধরনেরই ২টি মামলাতেও প্রায় একই ধরনের পর্যবেক্ষণ ছিল শীর্ষ আদালতের। ওই ২ মামলায় বলা হয়েছিল, কোনও নারী স্বেচ্ছায় কোনও পুরুষের সঙ্গে একত্রে স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকলে সহমতের ভিত্তিতে যৌন সম্পর্ক এবং ধর্ষণের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন।

ধর্ষণ এবং সহমতের ভিত্তিতে যৌন সম্পর্কের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে বলেও মামলায় উল্লেখ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট।