নিউ জিল্যান্ডে করোনার ‘ইমিউনিটি দায়’ চুকাচ্ছে শিশুরা

চিকিৎসকরা এই পরিস্থিতিকে বলছেন ইমিউনিটি দায় (ডেবট): যখন মহামারিতে মানুষ লকডাউনের কারণে একে অন্যের সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত ছিল তখন তাদের দেহে স্বাভাবিক যোগাযোগে যেসব ভাইরাস ছড়ায় সেগুলোর বিরুদ্ধে ইমিউনিটি গড়ে ওঠে না। নিউ জিল্যান্ডে কোভিড-১৯ লকডাউনের এই ইমিউনিটি ঋণের কারণে অনেক শিশু রেসিপাইরেটরি সিনসিয়াল ভাইরাস বা আরএসভিতে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসকরা সতর্ক করে বলছেন, হাসপাতালগুলোর শিশু ওয়ার্ড পূর্ণ হয়ে গেছে। অনেক হাসপাতালে বাচ্চাদের খেলার স্থানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এখবর জানিয়েছে।

খবরে বলা হয়েছে, ওয়েলিংটনে ৪৬ শিশু শ্বাসজনিত অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে অনেক নবজাতককে অক্সিজেন লাগিয়ে রাখা হয়েছে। অন্যান্য হাসপাতালেও এমন রোগী বাড়ছে।

আরএসভি একটি সাধারণ শ্বাসজনিত রোগ। প্রাপ্ত বয়স্কদের দেহে এটি হালকা উপসর্গ তৈরি করে। কিন্তু ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ভয়াবহ অসুস্থ বা প্রাণঘাতী হতে পারে। নিউ জিল্যান্ডের চিকিৎসকরা এই পরিস্থিতিতে ইমিউনিটি ঋণ বলে উল্লেখ করছেন।

এপিডেমিওলজিস্ট ও জনস্বাস্থ্য অধ্যাপক মাইকেল বাকের পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিতে বনের ব্রাশফায়ারকে রূপক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। যখন এক বা দুই বছর কোনও আগুনের ঘটনা ছাড়া পার হয়ে যায় তখন আগুন জ্বলে ওঠার মতো অনেক জ্বালানি থাকে। শেষ পর্যন্ত যখন তা জ্বলে ওঠে, তা হয় ভয়ানক।

বাকের বলেন, আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তা হলো অনেক শিশু স্বাভাবিক সংস্পর্শ থেকে বিরত ছিল। তাই তাদের দেহে এখন সাধারণভাবে বিরাজমান ভাইরাসগুলো প্রথমবারের মতো আক্রমণ করছে।

ইমিউনিটি দায় তৈরি হয়েছে তৈরি হয়েছে লকডাউন, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব ও মাস্কবিধির মতো পদক্ষেপের কারণে। এসব পদক্ষেপ শুধু যে করোনা ঠেকাতে কার্যকর তা নয়, এর ফলে একইভাবে ছড়ায় এমন অনেক রোগের সংক্রমণও ঠেকানো যায়। যেমন, ফ্লু, সাধারণ ঠান্ডা ও খুব কম পরিচিত আরএসভি।

নিউ জিল্যান্ডে লকডাউনের কারণে গত শীতে ফ্লু’র সংক্রমণ কমেছিল ৯৯.৯ শতাংশ এবং আরএসভি কমেছিল ৯৮ শতাংশ। অথচ দেশটিতে শীতের সময় এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা খুব কম থাকে না।

২০২১ সালের মে মাসে ইমিউনিটি দায় নিয়ে কয়েকজন ফরাসি চিকিৎসক এক গবেষণায় বলেছেন, ইতিবাচক এই সমান্তরাল প্রভাব স্বল্প মেয়াদে স্বাগত জানানোর মতো। কারণ এতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অতিরিক্ত চাপ নেওয়া থেকে বিরত রাখে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এটি নিজেই সমস্যা তৈরি করে। যদি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাল সংক্রমণ শিশুদের মধ্যে না ছড়ায় তাহলে ইমিউনিটি গড়ে ওঠে না। যা পরে বড় ধরনের সংক্রমণের দিকে নিয়ে যায়।

ফরাসি চিকিৎসকরা লিখেছেন, ইমিউন স্টিমুলেশনের অভাবে ইমিউনিটি দায় শুরু হয়। যখন মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রত্যাহার করা হবে তখন এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেবে।

গত পাঁচ সপ্তাহে নিউ জিল্যান্ডে প্রায় ১ হাজার আএসভি রোগী পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ইন্সটিটিউট অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ। সাধারণ ২৯ সপ্তাহের শীতকালে গড়ে ১ হাজার ৭৪৩ জন এই রোগে আক্রান্ত হন। অস্ট্রেলিয়াতেও এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

নিউ জিল্যান্ডে এরই মধ্যে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। অকল্যান্ডের মিডলমোর হাসপাতালে একটি খেলার স্থানকে চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে ১১টি স্পেশাল কেয়ার বেবি কট স্থাপন করা হয়েছে। অকল্যান্ড ও ক্যান্টারবারির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ শিশুদের ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যেতে অস্ত্রোপচার স্থগিত করেছে। বেশ কয়েকটি হাসপাতালে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাসপাতালগুলোতে না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।