প্রতিবেদনের শুরুতে গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের তৎপরতা শুরুর কথা তুলে ধরা হয়। বলা হয়, বাংলাদেশে পদ্মা নামে পরিচিত গঙ্গা নদী দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পানির একটি বড় উৎস। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের অংশ হিসেবে পানির স্বল্পতা আর লবণাক্ততা অঞ্চলটির জন্য অন্যতম সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আর সেকারণে এ বাঁধ প্রকল্পটিকে সবচেয়ে প্রাধান্য দিচ্ছে বাংলাদেশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লবণাক্ততা দিন দিন বাড়ছে। প্রস্তাবিত বাঁধ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিভিন্ন নদীপথ দিয়ে পানিগুলো ছাড়া যাবে আর তাতে লবণাক্ততার মাত্রা কমবে। তবে ভারতের সহায়তা ছাড়া এ বাঁধ নির্মাণ সম্ভব নয় বলে আগেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন তারা।
বাংলাদেশের তরফে এরইমধ্যে ২.১ কিলোমিটার দৈর্ঘের প্রস্তাবিত বাঁধটির নকশা প্রস্তুত করা হয়েছে। সম্ভাব্যতা পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। তারপরও ভারতের সায় না পাওয়ায় থমকে আছে প্রকল্পটি।
বাংলাদেশের তৎপরতার বিপরীতে ভারতের অনীহা
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের শুরুতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি চিঠি পাঠায় দিল্লি। সেখানে বলা হয়, ঢাকা থেকে পাঠানো প্রকল্প সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করেছেন ভারতীয় কারিগরি বিশেষজ্ঞরা। তাদের আশঙ্কা বাঁধটি নির্মিত হলে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতের এলাকাগুলোতে বন্যা দেখা দিতে পারে।
বাঁধটি নির্মিত হলে ভারতীয় ভূখণ্ডে পানির উচ্চতা বাড়বে না এমন নিশ্চয়তা চেয়ে ঢাকাকে পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা পরীক্ষার প্রতিবেদন এবং বৈজ্ঞানিক নকশা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। গত এপ্রিলে ভারতে সব কাগজপত্র পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত দেশটি এ ব্যাপারে সাড়া দিচ্ছে না বলে রয়টার্সকে বলেন বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। গত নভেম্বরে ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রী উমা ভারতীর তরফেও শিগগিরই এ ব্যাপারে সাড়া দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল বলে জানান বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রী।
গত অক্টোবরে বাংলাদেশে নিয়োজিত ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনারের সঙ্গে এক বৈঠকেও বাঁধ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভারতের সংশ্লিষ্টতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চীনা অর্থায়নের আশ্বাস
সম্ভাব্যতা পরীক্ষা অনুযায়ী, গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৭ বছর সময় লাগবে আর তার জন্য বরাদ্দ লাগবে ৪শ’ কোটি ডলার। তবে সরকার বলছে, এ তহবিল এখনও যোগাড় হয়নি। এদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রীর দাবি, গঙ্গা নদীর ওপর নির্ভরশীল এলাকাগুলোতে কৃষি ও মৎস উৎপাদন এবং ১১৩ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুত প্রকল্পের মধ্য দিয়ে ৫ বছরের মধ্যে বাঁধ নির্মাণের খরচ উঠে আসবে।
বাঁধটি নির্মাণের ব্যাপারে অর্থায়নের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীনা প্রতিষ্ঠান হাইড্রোচায়না করপোরেশন। এরইমধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠকও করেছে কোম্পানিটি। হাইড্রোচায়না কর্তৃপক্ষ রয়টার্সকে জানিয়েছে, পরবর্তী ৫ বছর পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে ২ হাজার কোটি ডলার ঋণ দিতে চায় চীন সরকার। তারা জানান, গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে তারা আগ্রহী। তবে তহবিল নির্ধারিত হবে দুদেশের সরকারের মধ্যে আলোচনার মধ্য দিয়ে।
গঙ্গা বাঁধের মাধ্যমে ১৬৫ কিলোমিটার এলাকা পানি সংরক্ষণাগার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। আর তাতে ২৯০ কোটি ঘন লিটার পানি ধারণের ক্ষমতা থাকবে। পানিসম্পদ মন্ত্রীর দাবি ১২৩টি আঞ্চলিক নদীর মাধ্যমে ২৬টি জেলায় এ পানি পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। সারাবছর ধরেই ব্যবহার করা যাবে সংরক্ষণাগারের পানি।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও বনজ সম্পদেরও সুরক্ষা দেওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সূত্র: রয়টার্স
/এফইউ/বিএ/