‘আমি মুসলিম, সন্ত্রাসী নই; আমাকে বিশ্বাস করলে জড়িয়ে ধরুন’


চোখ বাঁধা অবস্থায় মুনাকে জড়িয়ে ধরেন এক নারীপাশ্চাত্যের ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে দাড়িয়ে, এবার বিদ্বেষ আর ঘৃণার বিপরীতে ভালোবাসার অনন্য আহ্বান নিয়ে হাজির হলেন একজন ব্রিটিশ মুসলিম নারী। যখন মুসলিম নারীরা ইংরেজি না জানলে তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, যখন মুসলিম নারীদের ব্যক্তিগত পছন্দ আর পরিচয় জাতীয় পর্যায়ের বিতর্কের ইস্যুতে পরিণত হয়েছে; ঠিক তখন সহজাত মানবীয়তার আহ্বান নিয়ে সমাজে নিজেদের পরিচিত করানোর জন্য মুসলিম নারীদের আহ্বান জানালেন তিনি। নিজেও করলেন সেই কাজ।
উদ্যোগটি মুনা আদান নামের ১৮ বছর বয়সী এক নারীর। পূর্ব লন্ডনের এই বাসিন্দা দেখতে চাইলেন তিনি যেমন তার শহর তাকে সেভাবে গ্রহণ করে কিনা। আর সেজন্য শনিবার লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারে রীতিমতো একটি সামাজিক পরীক্ষাই চালিয়ে ফেলেন তিনি।
প্রথমে একটি কার্ডবোড নেন মুনা। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আমি মুসলিম, কোনও সন্ত্রাসী নই। যদি আপনারা আমাকে বিশ্বাস করেন তবে জড়িয়ে ধরুন।’ এরপর নিজের চোখ একটি কালো কাপড়ে ঢেকে নেন তিনি। তারপর অপেক্ষা করতে থাকেন।
ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মুনার এ আহ্বানে বিপুল সাড়া এসেছে। অবিশ্বাস্য সংখ্যার মানুষ মুনাকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরেন। তাদের আস্থা প্রকাশ করেন। যারা সাড়া দিয়েছেন তাদের মধ্যে লন্ডনের বাসিন্দার পাশাপাশি পর্যটকরাও ছিলেন।
মুনা আদানকে জড়িয়ে ধরেন অনেকে


মার্কিন সংবাদমাধ্যম হাফিংটন পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুনা জানান, মুসলিমদের সন্ত্রাসী বলার আগে নিজের শহরের লোকজন যেনও দুবার ভাবেন সে উদ্দেশ্যে তিনি এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি আমার ছোট্ট এ উদ্যোগ পৃথিবীকে খুব বেশি বদলে দিতে পারবে না। তারপরও এর মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে ভালোবাসার অনুভূতি তৈরি করা যাবে।’
মুনা আদানকে জড়িয়ে ধরেছে এক শিশুমুনা আদান জানান, তার এ পদক্ষেপের জন্য মুসলিম পুরুষরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করেছেন। একজন মুসলিম নারীর অন্য পুরুষদের সঙ্গে কোলাকুলি করা ঠিক কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা। মুনা আদানের মতে, সমালোচনা যাই হোক না কেনও তার পরীক্ষায় যে ব্যাপক সাড়া এসেছে তা খুবই চমৎকার।
মুনা বলেন, ‘আমি মনে করি, লোকজন এ উদ্যোগের পেছনকার বার্তা বুঝতে পেরেছেন। তারা বুঝতে পেরেছেন যে সত্যিকারের মুসলিমরা খুবই চমৎকার মানুষ, তাদের ব্যাপারে জানাশোনা বাড়ানো উচিত।’
একইরকমের ‘আস্থা অর্জনের জন্য কোলাকুলি’র উদ্যোগের আয়োজন হয়েছে সুইডেন, কানাডা ও ফ্রান্সেও। সেখানেও একইরকমের ফলাফল পাওয়া গেছে।
এদিকে মুনার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠন মুসলিম উইমেন’স নেটওয়ার্কের সাধারণ সচিব মুসুরুত জিয়া। তার মতে, এটি হলো অন্য ধর্মে বিশ্বাসী মানুষদের সঙ্গে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী মানুষদের বন্ধন এখনও অটুট থাকার নিদর্শন।
তিনি বলেন, প্রচলিত ধ্যান ধারণা ও নেতিবাচক মিথগুলোকে দূর করে লোকজনকে কাছে টানতে পেরেছেন মুনা। সহজাত মানবতাবোধ ও আস্থা থেকেই তার ডাকে সাড়া দিয়েছেন লোকজন। সূত্র: হাফিংটন পোস্ট


/এফইউ/বিএ/