‘রাগ হয়, যখন কেউ জিজ্ঞেস করে তার মাথা এমন কেন’


হাসপাতালে নবজাতকদের ওয়ার্ডের সামনে প্রচণ্ড ভিড়। তারমধ্যে একের পর এক অস্বাভাবিক আকৃতির মাথা নিয়ে জন্মানো শিশুদের নিয়ে হাজির হচ্ছেন একের পর এক মা। তাদের বসার জায়গার সংকুলান করতেই হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রিসিপসনিস্ট তাই বাইরের আম গাছ দেখিয়ে দিচ্ছেন মায়েদের। বলছেন অপেক্ষা করার জন্য। গাছের নিচের চেয়ারে যদি জায়গা পাওয়া যায়, তাওতো একটু ছায়ায় থাকা যাবে। জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে থাকা ল্যাটিন আমেরিকান দেশ ব্রাজিলের একটি হাসপাতালের এমন করুণ চিত্র তুলে ধরেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস।

মাইক্রোসেফালি আক্রান্ত শিশু
ব্রাজিলে আগে যেখানে গোটা দেশজুড়ে বছরে মাইক্রোসেফালি বা অস্বাভাবিক আকৃতির মাথা নিয়ে দেড়শো শিশু জন্ম নিতো সেখানে গত কয়েক মাসে হাজার হাজার অস্বাভাবিক আকৃতির মাথার শিশু নিয়ে হাজির হচ্ছেন মায়েরা। এরইমধ্যে অস্বাভাবিক মাথা নিয়ে জন্মানোর কারণ হিসেবে জিকা ভাইরাসকে দায়ী করা হয়েছে। গর্ভাবস্থায় জিকা ভাইরাস বহনকারী এক ধরনের এডিস মশার কামড় খেলে মাইক্রোফেলাসি আক্রান্ত শিশু জন্ম দিতে পারেন মা। সম্প্রতি ভাইরাসটি ল্যাটিন আমেরিকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর নারীদের আপাতত গর্ভধারণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ। তবে এরইমধ্যে অস্বাভাবিক মাথা নিয়ে যেসব শিশুর জন্ম হয়েছে তাদের ভবিষ্যত কী হবে তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন মায়েরা।
এমনই একজন ব্রাজিলীয় মা রোজিলিন ফেরেইরা। অস্বাভাবিক আকৃতির মাথা নিয়ে জন্মানো তিন মাসের সন্তান আর্থারকে বুকে জড়িয়ে হাসপাতালে এসেছেন তিনি। রোজিলিন জানান, তিন বার বাস পাল্টে তাকে এখানে আসতে হয়েছে। সন্তানের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় অশ্রু ঝড়ে পড়ছিলো তার গাল বেয়ে। তিনি জানান, গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় মাসে জিকা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো তার শরীরে দেখা দিয়েছিলো। 

মাইক্রোসেফালি আক্রান্ত এক শিশুকে খাওয়াচ্ছেন মা

কীভাবে সন্তানের দেখাশোনা করবেন তা নিয়ে যেনও চিন্তার ছায়া ফুটে উঠেছে রোজিলিনের চোখে মুখে। ‘কী ধরনের জীবন কাটাতে হবে ওর? আমি ঠিকমতো ওর দেখাশোনা করতে পারবো তো?’ প্রশ্ন করেন রোজিলিন। রোজিলিন জানান, আর্থারকে নিয়ে বাইরে চলাচলের সময় যখন নানা প্রশ্ন শুনতে হয় তখন তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘আমার খুব রাগ হয় যখন কেউ আর্থারকে দেখে জিজ্ঞেস করে তার মাথা এমন কেন? আমি তখন উত্তরে বলি-তেমন কিছুই না, কেবল ও একটু ভিন্ন। কিন্তু এরপরই আমি ভাবতে থাকি আসলেই অস্বাভাবিক ও। আমার সন্তানকে কখনও অন্য ছেলেদের মতো স্বাভাবিক দেখাবে না।’ 

মাইক্রোসেফালি আক্রান্ত এক শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন চিকিৎসক

ব্রাজিলের ওসওয়ালদো ক্রুজ হাসপাতালের চিকিৎসকরাও রোগীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। গত সেপ্টেম্বর থেকে এতো এতো রোগীর ভীড় দেখে উদ্বেগে পড়েছেন তারাও। হাসপাতালের বর্তমান তরুণ চিকিৎসক, সাবেক চিকিৎসক কিংবা অভিজ্ঞ প্রবীণ চিকিৎসক সবার কাছেই যেন এ এক দুঃস্বপ্ন। 

হাসপাতালটিতে ১৯৭৩ সাল থেকে কাজ করছেন চিকিৎসক অ্যাঞ্জেলা রোচা। নবজাতকবিষয়ক বিভাগের প্রধান তিনি। রোচা বলেন, ‘অনেক রোগের প্রাদুর্ভাবই দেখেছি, কিন্তু মাইক্রোসেফালিতে এতো নবজাতককে আক্রান্ত হতে দেখেনি।’ সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস 

/এফইউ/বিএ/