রমজান ঘিরে জমজমাট সিডনির রাত্রিকালীন মার্কেট

ফাউজান আহমেদ। সিডনির ল্যাকেম্বাতে রমজানের রাত্রিকালীন মার্কেটগুলো তার দারুণ লাগে। উৎসবমুখর রাতটি সময়ের সঙ্গে আরও জমজমাট হয়ে ওঠে।

সিডনির মুসলমানদের কাছে শহরতলীর এ আয়োজনের জনপ্রিয়তা ভীষণ। রমজান ঘিরে হ্যালডন স্ট্রিটে এ ভিড় কেবল মুসলিমদের নয়, অনেক অমুসলিমও উপভোগ করে উৎসবমুখর রাত।

গোটা রমজান মাসজুড়ে প্রতি রাতে এখানে বসে নানা দোকান। উটের বার্গার থেকে তান্দুরি মুরগি... আছে কাশ্মীরি চা, নাফেহের (মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্যবাহী খাবার যা পেস্ট্রি দিয়ে তৈরি)। স্বাদে এসব অতুলনীয়।  

ল্যাকেম্বায় দারুসসালাম নামে একটি বইয়ের দোকানের ম্যানেজার ফাউজান। তিনি জানান, দুই বছর আগে যখন স্থানীয় কাউন্সিল এই আয়োজনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তখন থেকে পরিস্থিতি বদলে যায়।

ফাউজান বলেন, ‘এটি মুসলমানদের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই। আগে এখানে নামাজকে কেন্দ্র মানুষের সমাগম ঘটতো, লোকেরা নামাজ শেষ করে যখন বের হতো, রাস্তা তখন ভরে যেতো। এখন সন্ধ্যা নামলেই মানুষের ঢল নামে।’

রমজান এমন একটি মাস যখন মুসলমানরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস করে, আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় বিভিন্ন ধরনের আত্মসংযম অনুশীলন করে। এই রমজানকে কেন্দ্র করে মসজিদ ঘিরে দোকানগুলো বসে।

 

ফাউজান আহমেদ।

 

প্রায় এক দশক আগে হ্যালডন স্ট্রিটে বেশ কয়েকটি খাবারের দোকান বসে। মুসলমানদের প্রার্থনা শেষ হওয়ার পর গভীর রাতে তাদের খাবার ও বসার জায়গা সরবরাহ করে থাকতো তারা।

দুই বছর আগে ক্যান্টারবেরি-ব্যাঙ্কটাউন কাউন্সিল এ আয়োজনে যুক্ত হয়। তারা রাস্তা বন্ধ করে দোকান বসানোর অনুমতি দেয়। বাজার নিয়ে নানা প্রচারও চালাতে থাকে তারা। কর্তৃপক্ষের এ কৌশল কাজে লেগেছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শহরের হাজার হাজার মানুষ রমজানের সময় এখানে উপস্থিত হয়।

মুসলিম সম্প্রদায়ের সবাই অবশ্য এ উদ্যোগে খুশী নন।  

ফাউজান বলেন, ‘এটি এমন কিছু যা আমাদের আর নেই। রমজান আমাদের কাছে আধ্যাত্মিক মাস। লোকেরা ল্যাকেম্বা মসজিদে রাতে রমজানের নামাজ পড়তে আসে। বাজারের জনপ্রিয়তার কারণে এখন তারা ট্র্যাফিক এবং পার্কিং নিয়ে লড়াই করে।’

তিনি বলেন, ‘এখানে আসা অধিকাংশ অমুসলিম। আমি এটাকে খারাপ চোখে দেখছি না। তবে এমন আয়োজন না করে রমজানের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করার ব্যবস্থা করা গেলে ভাল হতো।’

তবে স্থানীয় রেস্তোরাঁ মালিকদের কাছে বাজারের সম্প্রসারণ ব্যবসার জন্য আশীর্বাদ প্রমাণ হয়েছে।

হ্যালডন স্ট্রিটের দোকান এক্সট্রা ক্রিস্পির মালিক ও ম্যানেজার সেলিম শেখ বলেন, ‘এটা ল্যাকেম্বার জন্য ভালো, হ্যালডন স্ট্রিটের জন্য ভালো, আমাদের সবার জন্য ভালো। বাণিজ্যিকীকরণ হয়ে গেলেও, আয়োজনটি সবার জন্যই হওয়া উচিত।’

সেলিম বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউন্সিলের সম্পৃক্ততাকে স্বাগত জানাই। কারণ এটি আয়োজনকে আরও সংগঠিত করেছে, এতে কোনও সন্দেহ নেই। আমরা চাই এটি আরও বড় হোক, আরও বেশি মানুষ এখানে আসুক। এতে আমাদের এলাকার উন্নতি হবে।’

 

 

শহরের মেয়র খাল আসফোর বলেন, ‘সিডনি এবং আন্ত:রাজ্যজুড়ে বাজারগুলোতে আরও মানুষকে টানতে কাউন্সিল আয়োজনে জড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।’

তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলের ভূমিকার মধ্যে রয়েছে রাস্তা বন্ধ করা, ভিড় ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, খাবার পরিচালনা এবং পার্কিং সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর ওপর নজরদারি করা।’

তারপরও মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু সদস্যের মধ্যে উদ্বেগ রয়ে গেছে আয়োজনের বাণিজ্যীকরণ নিয়ে।

 

 

ডা. মেহল ক্রায়েম একজন গবেষক এবং লেখক। জাতি এবং লিঙ্গ নিয়ে ব্যাপক জ্ঞান তার।

তিনি বলেন, ‘আমলাতান্ত্রিককরণের ফলে রমজানের আসল অর্থ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি আমরা। এতে পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যায়। আসলে কাউন্সিলগুলো এসব আয়োজনে জড়িয়ে পড়লে তখন তা অনেক বড় সম্প্রদায়ের ইভেন্টে পরিণত হয়। কীভাবে এটি মুসলিমদের কাছে আরও গ্রহনযোগ্য করে তোয়াল যায় তা নিয়ে আয়োজকদের অবশ্যই ভাবতে হবে।’ দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে