লাদেনের কাছে থেকে অর্থ সহায়তা নিয়েছিলেন নওয়াজ!

নওয়াজ ও লাদেনআল কায়েদার সাবেক প্রধান ওসামা বিন লাদেনের কাছ থেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ অর্থ নিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে এক বইয়ে। আইএসআই-এর সাবেক অপারেটিভ খালিদ খাজার স্ত্রী শামামা খালিদের লেখা ‘খালিদ খাজা: শহীদ-ই-আমান’ শীর্ষক সদ্য প্রকাশিত বইয়ে এ দাবি করা হয়। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন এ খবর নিশ্চিত করেছে।
শামীমা তার বইয়ে লিখেছেন, ‘জিয়ার (পাকিস্তানের সামরিক শাসক জিয়াউল হক) শাসনামলের পর বেনজির ভুট্টো নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-র বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আল কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা গ্রহণ করেছিলেন পিএমএল-এন-এর প্রধান মিয়া মোহাম্মদ নওয়াজ শরিফ।’
বইটিতে দাবি করা হয়, নওয়াজ শরিফ একটি ইসলামিক ব্যবস্থা চালুর কথা বলেছিলেন, যা খালিদ খাজা ও বিন লাদেনকে আকৃষ্ট করেছিল। কিন্তু আল কায়েদা নওয়াজ শরিফের পিছনে বিপুল অর্থ খরচ করলেও তিনি ক্ষমতায় এসে সব প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যান। বইটিতে নওয়াজ শরিফের কাছের মানুষ বলে পরিচিত আইএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদ গুলের কথাও উল্লেখ করা হয়।
বইয়ের দাবি অনুযায়ী, কিছু সময়ের জন্য নওয়াজ শরিফের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল খালিদ খাজার। এতে আরও বলা হয়, লাদেনের সঙ্গে খালিদ খাজাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন আল কায়েদার অন্যতম নেতা এবং লাদেনের গুরু আবদুল্লাহ আজম। তিনি ‘ফাদার অব গ্লোবাল জিহাদ’ বলে পরিচিত ছিলেন। আবদুল্লাহ আজম একজন ফিলিস্তিনি সুন্নি। তিনি আরব বিশ্ব থেকে জিহাদি আদর্শে উজ্জীবিতদের সংগ্রহ করতেন। সেই সাথে তিনি ছিলেন আল-কায়েদার অর্থের প্রধান সংগ্রাহক।

এই বইয়ে দাবি করা হয়, খালিদ খাজা যখন বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী অঞ্চলে শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন, তখন পাকিস্তানি তালেবানদের একটি বিচ্ছিন্ন গ্রুপ তাকে হত্যা করে। তিনি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ইমাম ও ব্রিটিশ সাংবাদিক আসাদ কুরেশির সঙ্গে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে গিয়েছিলেন। ২০১০ সালের ২৬ মার্চ তারা নিখোঁজ হন। তখন তারা একটি তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজ করছিলেন। খালিদ খাজা ও কর্নেল ইমামকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করে। তবে পরবর্তীতে, কুরেশিকে মুক্তিপণের বিনিময়ে মুক্তি দেয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের সপ্তাহ দুয়েক পরেই তার লাশ পাওয়া যায়। তাকে হত্যার দায় স্বীকার করে এশিয়ান টাইটারস নামের একটি গ্রুপ। পূর্বে এ গ্রুপের নাম শোনা যায় নি।

এর আগে খাজা টিটিপি নেতা ওয়ালিওর রহমান মাসুদ, হাকিমুল্লাহ মাসুদ এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের কমান্ডার শের খানের সাথে দেখা করেন বলে বইয়ে উল্লেখ করা হয়।

খাজার মরদেহে একটি চিঠি পাওয়া যায়, যাতে দাবি করা হয়, লাল মসজিদ হামলার ঘটনায় খাজা যুক্ত থাকায় তাকে হত্যা করা হয়। তাকে হত্যার পূর্বে কথিত এশিয়ান টাইগারস গ্রুপ একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে। তাতেও একই অভিযোগ আনা হয় খালিদ খাজার বিরুদ্ধে। ফুটেজে দেখা যায়, খাজা সেখানে তার স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন যে, তিনি একইসাথে সিআইএ এবং আইএসআই-এর ডবল এজেন্ট। শামীমা খালিদের বইয়েও এই বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে।

এই বইটিতে মানবাধিকার এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়ে খালিদ খাজার প্রশংসা করে লেখা লাল মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল আজিজের এক পৃষ্ঠার একটি নোটও রয়েছে। সেখানে ওই ইমাম আরও উল্লেখ করেন, খাজা প্রচণ্ড চাপের মধ্যে তার স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। সূত্র: ডন।

/এসএ/বিএ/