ড. ইউনূসের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিতে আবারও বিশ্বনেতাদের আহ্বান

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান আইনি হয়রানি ও সম্ভাব্য কারাদণ্ডের আশঙ্কায় উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন ২৪১ জন বিশ্বনেতা। এদের মধ্যে ১২৫ জনের বেশি নোবেলজয়ী রয়েছেন। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) ওয়াশিংটনভিত্তিক সিভিক কারেজ নামে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে। এটি তাদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো তৃতীয় চিঠি। এছাড়া সংগঠনটি প্রটেক্ট ইউনূস নামে একটি প্রচারণা শুরু করেছে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্বাক্ষর থাকা চিঠিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলা হয়েছে, আমরা নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর চলমান আইনি হয়রানি ও সম্ভাব্য কারাদণ্ডের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করতে এই চিঠি লিখেছি। আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রচার ও সুরক্ষার জন্য জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক আইরিন খানের বক্তব্যের সঙ্গে ঐকমত্য জানাচ্ছি। তিনি ১ জানুয়ারি এই রায়কে ‘ন্যায়বিচারের একটি প্রতারণা’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

রায় নিয়ে চিঠিতে বিশ্বনেতারা বলেছেন, ত্বরান্বিত আইনি প্রক্রিয়া এবং বাংলাদেশের আইন কীভাবে প্রয়োগ হয় তা নিয়ে ধারাবাহিকতা রয়েছে। রায়ে অধ্যাপক ইউনূসসহ চার ব্যক্তির কারাদণ্ড হয়েছে। কিন্তু এটি স্পষ্ট যে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে ছোট অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগস্টের শেষ দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা চিঠি স্বাক্ষরকারীদের আইনজীবীসহ বিশেষজ্ঞ পাঠানোর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ড. ইউনূসের মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখার জন্য কোনও অন্যায় বা অন্যায় বিচার হয়েছে কিনা। আমরা আপনার আমন্ত্রণ গ্রহণ করছি। এই পর্যালোচনায় শুধু শ্রম আইনের মামলা নয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের বর্তমান তদন্তও থাকা উচিত।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন ড. ইউনূসের রায়ের পর বলেছেন, বাংলাদেশের এমন একটি সরকার প্রাপ্য যে নিপীড়নের পরিবর্তে দেশের সবচেয়ে সম্মানিত নাগরিকদের সম্মান ও সমর্থন দেবে। আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে এই অর্থহীন কর্মকাণ্ড বন্ধ করার।

এতে বলা হয়েছে, অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে রায় সরকার কর্তৃক বছরের পর বছর নিপীড়নের চূড়ান্ত পরিণতি। এটি তার বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৫০টিরও বেশি মামলার মধ্যে একটি, যা দেশের ইতিহাসে বিচারিক হয়রানির সবচেয়ে মারাত্মক উদাহরণগুলোর একটি।

চিঠিতে আইরিন খানকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, একজন সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ও নোবেলজয়ী, যিনি দেশের জন্য সম্মান ও গর্ব নিয়ে এসেছেন, তাকে অযৌক্তিক কারণে নির্যাতন করা হচ্ছে।

এতে স্বাক্ষরকারী অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ডের ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের একটি বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, মুহাম্মদ ইউনূসের মামলাটি বাংলাদেশের মানবাধিকারের বিপর্যস্ত অবস্থার প্রতীক। আইনের অপব্যবহার এবং প্রতিহিংসা বাস্তবায়নের জন্য বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহার বেমানান এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিগুলোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

এর আগে ২০২৩ সালের মার্চ ও আগস্টে একই ধরনের দুটি চিঠি লিখেছিলেন তারা। প্রতিটি চিঠিতে আগের তুলনায় বেশি সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির স্বাক্ষর ছিল।