শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত লাখ লাখ শিশু – যাদের বেশিরভাগই দরিদ্র্য দেশগুলোর, তাদের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে ইউনেস্কো কার্যক্রম চালায়। এবার নারী দিবস উপলক্ষে সংস্থার পক্ষ থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঠ্যপুস্তকে নারী চরিত্রগুলো সবসময়ই হয় অপ্রধান। আর তা নারীর পেশাগত আকাঙ্ক্ষাকে সংকুচিত করে রাখে। ইউনেস্কোর জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ম্যানোস অ্যান্তোনিনিস একে লৈঙ্গিক সমতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ‘লুকানো বাধা’ বলে উল্লেখ করেন।
প্রতিবেদনে এশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টেনে বলা হয়, সেসব দেশের পাঠ্যপুস্তকে পুরুষ চরিত্রগুলোর বেশিরভাগই চিত্রিত করা হয় ব্যবসায়ী, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদ হিসেবে। অপরদিকে, নারী চরিত্রগুলো আবর্তিত হয় রাঁধুনি এবং শিশু পরিচর্যার মতো গৃহস্থালি কর্মকে ঘিরে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এমনকি বিজ্ঞান অথবা গণিত বইয়েও পুরুষ চরিত্রগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান বইয়ের ২০টি চরিত্রের মধ্যে মাত্র একটি নারী চরিত্রের দেখা মেলে। পাঠ্যপুস্তকে লিঙ্গীয় সমতার পক্ষে বক্তব্যের হারও অত্যন্ত নগণ্য। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পাঠ্যপুস্তকে লিঙ্গীয় সমতা তুলে ধরার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে তা পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নকারী কর্তৃপক্ষের বাধার সম্মুখীন হয়েছে।
ম্যানোস অ্যান্তোনিনিস ইউনেস্কোর বিশ্ব শিক্ষা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন থেকে উল্লেখ করেছেন, সকল ছেলে ও মেয়ে শিশুকে স্কুলে পাঠানোটা কেবল এই লড়াইয়ের একটা অংশ। আর তাদের সেখানে কি পড়ানো হচ্ছে, সেটাও ততোটুকুই গুরুত্বপূর্ণ। লৈঙ্গিক বৈষম্যমূলক পাঠ্যপুস্তক নারী শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা ও আত্মসম্মানে আঘাত হানে এবং স্কুলে অংশগ্রহণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ‘দারিদ্রতাই লিঙ্গীয়বাদ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে উন্নয়ন বিষয়ক গ্রুপ, ওয়ান। সেখানে বলা হয়, লৈঙ্গিক বৈষম্য এবং দারিদ্র্য একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। আফ্রিকার সাব-সাহারার মতো দরিদ্র অঞ্চলের নারীরা তাদের পুরুষসঙ্গীদের দ্বারা বেশি নিপীড়নের শিকার হন। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে প্রায় অর্ধ কোটি নারী লিখতে-পড়তে জানেন না, যা পুরো বিশ্বের নিরক্ষরতার দুই-তৃতীয়াংশ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মালিতে প্রায় ৯৩ শতাংশ নারী জীবনে কখনও স্কুলে যায়নি।
ওই প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনৈতিক সুযোগ, ব্যাংক একাউন্ট এবং রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বকে কেন্দ্র করে এমন কিছু দেশের নাম এসেছে, যেখানে জন্মের পরপরই নারীদের ‘নারী হতে শেখানো’ হয়। শীর্ষ ১০ দেশ হলো – নাইজার, সোমালিয়া, মালি, সেন্ট্রাল আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, ইয়েমেন, কঙ্গো, আফগানিস্তান, আইভরিকোস্ট, শাদ এবং কমোরোস। সূত্র: বিবিসি।
/এসএ/এফইউ/