‘ইইউ-তুরস্ক সমঝোতা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’

শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় ইইউ এবং তুরস্কের মধ্যকার সমঝোতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হতে পারে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, বিদেশিদের দলে দলে তৃতীয় দেশে ফিরিয়ে দেওয়া ইউরোপীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার জেনেভায় কথা বলেন ইউরোপে ইউএনএইচসিআর- এর আঞ্চলিক পরিচালক ভিনসেন্ট কোচেটেল। তিনি বলেন, ‘বিদেশিদের সমষ্টিগত বহিষ্কার ইউরোপিয়ান কনভেনশন অব হিউম্যান রাইটসের লঙ্ঘন।’

শরণার্থী ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তুরস্কের যৌথ পরিকল্পনার আওতায় তুরস্ক থেকে গ্রিসে পৌঁছানো সব অভিবাসীকে নিজ দেশে থাকার ব্যবস্থা করবে আঙ্কারা। তুরস্কে ফেরা প্রত্যেক সিরীয় শরণার্থীর বিনিময়ে দেশটিতে বৈধভাবে বাস করা একজন করে সিরীয়কে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) পুনর্বাসন করা হবে। এছাড়া শরণার্থীদের গ্রহণের জন্য অর্থ সাহায্যও পাবে আঙ্কারা।

noname

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল পরিকল্পনাটিকে আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকারের ক্ষেত্রে একটি বড় ধাক্কা বলেই মনে করছে।

ব্রাসেলসে সোমবারের সম্মেলনে আলোচিত চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়নি। তবে এ বিষয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে প্রাথমিক সমঝোতা হয়েছে।

তুরস্কের সঙ্গে চলমান আলোচনাকে একটি বিশাল সাফল্য বলে উল্লেখ করেছেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক। ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের প্রেসিডেন্ট জিন ক্লড ঝংকার-এর মুখপাত্র মার্টিন সিলমার এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, তুরস্কের সঙ্গে যুগান্তকারী চুক্তি।

ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, ‘নতুন পরিকল্পনায় অনিয়মিত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে যারা গ্রিসে পৌঁছাচ্ছেন, তাদেরকে তুরস্কে ফেরত পাঠানো হবে। আগামী ১৭-১৮ মার্চ ইউরোপীয়ান কাউন্সিলের নির্ধারিত বৈঠকে এ পরিকল্পনার ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

চুক্তির ব্যাপারে নিজের আশাবাদের কথাও জানান ডোনাল্ড টাস্ক। তিনি বলেন, ‘তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান জানিয়েছেন তুরস্কের সমুদ্রসীমা পাড়ি দিয়ে যাওয়া শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনতে সম্মত আঙ্কারা।’

এর আগে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে জড়ো হন বিশ্বনেতারা। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেলসহ ইউরোপের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাভুতোগলু। এখন পর্যন্ত পরিকল্পনার বেশিরভাগ প্রস্তাবনায় উভয়পক্ষই সম্মত হয়েছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের মতে, তুরস্ক শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে সক্ষম হলে এবং তারা  আর ইউরোপে না আসলে ওইসব শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার বিনিময়ে ইস্তাম্বুল ইউরোপের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার যোগ্য।

এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার ২৭ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে প্রতিবেশি দেশ তুরস্ক। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম ইউরোপ এতবড় অভিবাসী সংকটে পড়েছে। ২০১৫ সালে অন্তত ১০ লাখ শরণার্থী ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছেন। ক্রমবর্ধমান শরণার্থীদের কোটা প্রথা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে ইউরোপের দেশগুলো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আরও শরণার্থী গ্রহণে তুরস্কের ওপর এই চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। সূত্র: আল জাজিরা।

/এমপি/বিএ/