প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে আল-শাবাবের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মার্কিন বিমান হামলা

আফ্রিকার দেশ সোমালিয়ায় মার্কিন ড্রোন হামলায় দেশটির চরমপন্থী সংগঠন আল-শাবাবের সম্ভাব্য ১৫০ সদস্য নিহতের ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের কাছে ওই ঘটনার বিবরণ হাজির করেছেন।

মঙ্গলবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, সপ্তাহ শেষে সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে ১৯৫ কিলোমিটার উত্তরে আল শাবাবের একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়ে এই অপারেশন সফল করা সম্ভব হয়েছে। পেন্টাগনের মুখপাত্র ক্যাপ্টেন জেফ ডেভিস জানান, আল-শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অপারেশন সফল হয়েছে। তারা সোমালিয়ায় মার্কিন ও আফ্রিকান ইউনিয়ন বাহিনীর ওপর বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করেছিল।

আল-শাবাব

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বশির ধুরে নামের এক রাখাল টেলিফোনে দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, সোমালি এবং পশ্চিমা গোয়েন্দাদের আড়ালে থাকতে তারা এক গোপন আস্তানায় ঘাঁটি গেড়েছিলেন। কিন্তু শনিবার রাতে আকস্মিকভাবে সেখানে বিমান হামলা চালানো হয়। তিনি বলেন, ‘বৃহৎ বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। আশেপাশের সব জায়গায় আগুণ লেগে যায়, আর কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছিলেন না। সকালের দিকে আমি ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পাই। এটিকে পোড়া বাড়ির মতো দেখাচ্ছিল। সবকিছুই পুড়ে গিয়েছিল। আমি দেখলাম, তিনটি পুড়ে যাওয়া গাড়ি সেখানে পড়েছিল। আল-শাবাব সদস্যরা মরদেহগুলো সংগ্রহ করে ট্রাকে তুলে রাখছিল। এরপর তারা সেখান থেকে চইলে যায়। মরদেহগুলো কোথায় কবর দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না।’

ধুরে জানান, ওই হামলার পরপরই আল-শাবাব সদস্যরা ভেতরকার মার্কিন গুপ্তচরের খোঁজ চালাতে শুরু করেন। তারা অন্তত ১২ সন্দেহভাজনকে আটক করে, যাদের বেশিরভাগই আশেপাশের গ্রামের রাখাল। তিনি বলেন, ‘আমি ভাগ্যবান, কারণ তারা খোঁজ শুরুর আগেই আমি ওই এলাকা থেকে সরে যেতে পেরেছি। আমি জানি, ওই বিমান হামলার পর আল-শাবাব আরও রূঢ় হয়ে উঠবে।’ ধুরে জানান, রাসো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ নতুন সদস্যকে প্রশিক্ষণের জন্য নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে অন্তত অর্ধেক ওই হামলায় নিহত হয়েছেন বলে তিনি জানান।

আল-শাবাবের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মার্কিন বিমান হামলা

বুলোবুর্তে জেলার কমিশনার আবসিয়াসিস মোহামেদ দুরো নিহতের ওই সংখ্যাকে আরও বেশি বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা ছিল এক ভীষণ বিমান হামলা, আমি এটা নিশ্চিত করছি। প্রায় ২০০ আল-শাবাব সদস্য ওই হামলায় নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে অন্তত ৫ জন উচ্চস্থানীয় কমান্ডার রয়েছেন।’ তিনি আরও জানান, ওই হামলায় ইয়ুসুফ আলী উগ্যাস নামক এক আঞ্চলিক কমান্ডার এবং অর্থসংস্থানের প্রমুখ মোহামেদ মিরে নিহত হয়েছেন।

পেন্টাগন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ওই আকস্মিক ড্রোন হামলায় দেড় শতাধিক আল-শাবাব সদস্য নিহত হয়েছেন। আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কিত আল-শাবাব ওই হামলার ঘটনাটি নিশ্চিত করলেও হতাহতের সংখ্যাকে অতিরঞ্জিত বলে উল্লেখ করেছে।

ওয়াশিংটনে আটলান্টিক কাউন্সিলের আফ্রিকা সেন্ট্রারের পরিচালক জে পিটার ফাম সতর্ক করেছেন, আল-শাবাব এ ধরনের আঘাতের পরেও পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠতে পারে যে কোনও সময়। তিনি সংবাদ সংস্থা এপিকে বলেছেন, ‘আল-শাবাবের এক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এতো নতুন সদস্য নিয়োগ একটা চিন্তার বিষয়। যা ওই গ্রুপটির বর্তমান ক্ষমতাকেই নির্দেশ করে।’

ইএক্সএক্স আফ্রিকার বিশ্লেষক রবার্ট ব্যাসেলিং বলেন, ‘১৫০ জন আল-শাবাব সদস্য নিহত হওয়ার বিষয়টি আল-শাবাবের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ আঘাত। তা সোমালিয়ায় তাদের আক্রমণাত্মক ক্ষমতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।’ তবে তাদের ওপর এই হামলা চলমান না থাকলে আল-শাবাব আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে বলেও তিনি সতর্ক করেছেন। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

/এসএ/বিএ/