রুশ সেনাবাহিনীর পক্ষে ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ৭০ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে এই তথ্য উঠে এসেছে।২০২২ সাল থেকে শুরু হওয়া রুশ অভিযানে প্রথম থেকেই স্বেচ্ছাসেবক ও বেসামরিক নাগরিকরা সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে থাকেন। তবে এই প্রথমবার নিহতের সংখ্যায় এত বৃদ্ধি দেখা গেলো।
দেশটির মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিতই নিহতদের ছবি, শেষকৃত্যের ছবি এসব দিয়ে তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। অফিসিয়াল প্রতিবেদন ও অন্যান্য উন্মুক্ত উৎস থেকে এগুলো সংগ্রহ করেছে বিবিসি রাশিয়া ও স্থানীয় ওয়েবসাইট মেডিয়াজোনা।
এসব তথ্য কর্তৃপক্ষ অথবা নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয়েছে বলে বিবিসি নিশ্চিত করেছে। তাদের প্রত্যেকে যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
সমাধিস্থলে খোঁড়া নতুন কবরের নামফলক থেকেও ইউক্রেনে মৃত যোদ্ধাদের পরিচয় জোগাড় করা গেছে। এসব কবরে সাধারণত পতাকা ও পুষ্পমাল্য দিয়ে থাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
এখন পর্যন্ত যুদ্ধে নিহত ৭০ হাজার ১ শ’ ১২ জনের পরিচয় নিশ্চিত করতে পেরেছে বিবিসি। তবে সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে তাদের ধারণা। কেননা অনেক পরিবার এসব তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করে না। এছাড়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার দখলকৃত ডোনেস্ক ও লুহানস্কে নিহত যোদ্ধাদের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।
নিহতদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ১৩ হাজার ৭শ’ ৮১ জন। এটি মোট সংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। এর আগে বাহিনীতে অপরাধীদের মধ্যে থেকে নেওয়া সদস্যদের মধ্যে নিহতের হার সবচেয়ে বেশি ছিল, প্রায় ১৯ শতাংশ। আর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাধারণ বেসামরিক–সেনাসদস্যের হার ১৩ শতাংশ।
শেষ এক বছরে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১শ’ স্বেচ্ছাসেবী প্রাণ হারিয়েছেন। কোনও সপ্তাহে এই সংখ্যা ৩শ ১০ জনের বেশি ছাড়িয়েছে।
যুদ্ধে নিহতদের সংখ্যা নিয়ে প্রায় কোনও তথ্য প্রকাশ করে না রাশিয়া। ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, এই যুদ্ধে তার প্রায় ৩১ হাজার সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। তবে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যুদ্ধে নাম লেখানো অধিকাংশ ব্যক্তি রাশিয়ার এমন সব অঞ্চলের বাসিন্দা, যেখানে স্থিতিশীল ও সম্মানজনক চাকরি পাওয়া বেশ কঠিন। তাই অনেকেই স্বেচ্ছায় যোগ দিয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে চেচনিয়ার অনেকে মানবাধিকার কর্মীদের জানিয়েছেন, তাদেরকে হুমকি ধামকি দিয়ে জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ানো হয়েছে।
অনেকে আবার জানিয়েছেন, তারা চুক্তিনামার সব শর্ত বুঝে উঠতেই পারেননি।
এছাড়া, রাশিয়ার সাধারণ চাকরির থেকে সেনাবাহিনীতে বেতন ৫ থেকে ৭ গুণ পর্যন্ত বেশি হতে পারে। এর সঙ্গে থাকে বিনামূল্যে শিশু চিকিৎসা ও কর মওকুফসহ বিভিন্নরকম সামাজিক সুবিধা। এসব কারণেই যুদ্ধে যোগদানের একটা হিড়িক পড়ে গিয়েছিল।