আটকের পর মন্ত্রী হচ্ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট!

দুর্নীতির দায়ে আটকের পর অবশেষে সরকারের মন্ত্রিপরিষদে ঠাঁই পেতে চলেছেন ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় বিবিসি।

বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে ১৫ মার্চ মঙ্গলবার লুলার সঙ্গে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের সাক্ষাতের কথা রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে লুলা দা সিলভা’র তরফে আনুষ্ঠানিক কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ব্রাজিলের ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টি বলছে, লুলা মন্ত্রী হলে প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ-এর দুর্বল হয়ে পড়া সরকার আবার শক্তি ফিরে পাবে। তবে সমালোচকরা বলছেন, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ থেকে পূর্বসূরিকে বাঁচাতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বর্তমন প্রেসিডেন্ট।

ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা

মন্ত্রী হলে লুলা দা সিলভাকে সরাসরি গ্রেফতার বা জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে না। সেই সঙ্গে আইনি কিছু ছাড়ও পাবেন তিনি। তবে ঝানু রাজনীতিক দিলমা রুসেফ শুধু এ কারণেই লুলাকে মন্ত্রী বানাচ্ছেন না। এর সঙ্গে তার দুর্বল হয়ে পড়া সরকারের অস্তিত্বের বিষয়টিও রয়েছে।

পোড় খাওয়া রাজনীতিক লুলা মন্ত্রী হলে ব্রাজিলে চলমান টালমাটাল পরিস্থিতি সামাল দেওয়া রুসেফের জন্য সহজ হবে বলে মনে করছেন দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এর আগে গত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে লুলা দা সিলভাকে দুর্নীতির দায়ে আটক করে পুলিশ। দেশটির রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত তেল কোম্পানি পেট্রোব্রাস-এর বিশাল অঙ্কের ঘুষ কেলেঙ্কারির তদন্ত করতে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী শুক্রবার সিলভাকে আটক করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তার ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।

ব্রাজিলের ফেডারেল পুলিশ কর্মকর্তারা সাবেক প্রেসিডেন্টের বাসভবন তল্লাশি শেষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যান।

ব্রাজিলে গত কয়েক বছর ধরে পেট্রোব্রাসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিং-এর অভিযোগ তদন্ত করছে পুলিশ।

এরপর গত ৯ মার্চ লুলার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ গঠন করেন সাও পাওলোর প্রসিকিউটররা। পরদিন, ১০ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে তার গ্রেফতার দাবি করেন তারা। অর্থপাচার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লুলাকে ‘আইনি হেফাজতে’ নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

প্রসিকিউটররা জানান, গুয়ারুজা রিসোর্টে তিন তলাবিশিষ্ট পেন্টহাউজের মালিকানা প্রমাণে ব্যর্থ হন লুলা। তবে লুলা তার ওপর আরোপ করা সব অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মন্তব্য করেছেন।

প্রসিকিউটররা বলছেন, তদন্ত চলাকালে লুলা দা সিলভা বাধা দিতে পারেন, তাই তাকে গ্রেফতার করা দরকার।

প্রধান প্রসিকিউটর ক্যাসিও কনসেরিনো বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় তদন্ত প্রধানত পরিচালিত হবে ওই বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের মালিকানা নির্ধারণের জন্য।’ তবে আদালত এখনও তার গ্রেফতারের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত জানননি।

লুলার আইনজীবী ক্রিস্টিনো জানিন মার্টিনস জানান, সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ‘মিডিয়া ক্যাম্পেইন’ চলছে। তিনি বলেন, ‘যার নামে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে, তিনিই ওই সম্পত্তির মালিক। এখানে কেউ এ নিয়ে অন্য কিছু মনে করলে কিছু যায় আসে না।’

তিনি আরও জানান, লুলা ওই প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছেন, অসম্পূর্ণ অ্যাপার্টমেন্টেও গিয়েছেন। কিন্তু পরে সম্পত্তিটি না নিয়ে অর্থ ফেরত চেয়েছিলেন।

এক সংবাদ সম্মেলনে প্রসিকিউটররা জানান, সিলভা আর তার স্ত্রীসহ অন্তত ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে। ওই তালিকায় সিলভার ছেলের নামও রয়েছে।

ব্রাজিলের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা লুলা দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন শেষে ২০১১ সালে নিজ দলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দিলমা রুসেফ-এর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তার শাসনামলে দেশে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয় এবং লাখ লাখ মানুষ দারিদ্রের অভিশাপ থেকে মুক্তি পান। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পেট্রোব্রাস দুর্নীতিতে তার জড়িত থাকার গুঞ্জন ওঠার পর লুলার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে। তবে লুলা এবং তার সমর্থকরা এসব অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক’ বলে উল্লেখ করেছেন। সূত্র: বিবিসি।

/এমপি/