বাংলাদেশ ব্যাংকে সাইবার ডাকাতি

ফিলিপাইনে সিনেট তদন্ত কমিটির শুনানি

মাইয়া সান্তোস দিগুইতোযুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার পাচার হওয়ার বিষয়ে ফিলিপাইনের সিনেট তদন্ত কমিটির মঙ্গলবারের শুনানিতে সব প্রশ্নের জবাব ‘এক্সিকিউটিভ সেশন’-এ দিতে চেয়েছেন অভিযুক্ত আরসিবিসি ব্যাংক ম্যানেজার। উল্লেখ্য ‘এক্সিকিউটিভ সেশন’-এর আওতায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় মামলার সঙ্গে জড়িতরা ছাড়া অন্য কেউ উপস্থিত থাকতে পারেন না। তবে, আরসিবিসি ব্যাংকের ম্যানেজারকে ব্যক্তিগতভাবে ‘এক্সিকিউটিভ সেশনে’ জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কিনা তা নিশ্চিত না করলেও, পুরো প্রক্রিয়াকে ‘এক্সিকিউটিভ সেশনের’ আওতায় আনার ব্যাপারে সম্মত হয়নি তদন্ত কমিটি।
শুনানিতে তদন্ত কমিটির প্রধান সিনেটর তেওইফিস্তো গুইনগোনা রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) জুপিটার ব্রাঞ্চের ম্যানেজার মাইয়া সান্তোস দিগুইতোকে জিজ্ঞেস করেন, তার ব্রাঞ্চে মাইকেল ফ্রান্সিসকো ক্রুজ, জেসি ক্রিস্টোফার লাগরোসাস, এনরিকো তেওদোরো ভাসকুয়েজ এবং আলফ্রেড সান্তোস ভারগারা যে চারটি অ্যাকাউন্ট খোলেন, যার মাধ্যমে ওই ৮১ মিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়, সে সম্পর্কে তিনি কি জানেন। এতোদিন কোনও লেনদেন না হলেও হঠাৎ কয়েক মিলিয়ন মার্কিন ডলার একটা অ্যাকাউন্টে চলে আসলো, আর এটিকে তার কাছে সন্দেহজনক কিছু মনে হয়নি কেন? এর উত্তরে দিগুইতো বলেন, তিনি ‘এক্সিকিউটিভ সেশন’-এ এই প্রশ্নের উত্তর দিবেন।
উল্লেখ্য, গত বছর ৫০০ ডলার করে জমা দিয়ে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনে (আরসিবিসি) ২০১৫ সালের ১৫ মে ওই ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টগুলো খোলা হয়। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই অ্যাকাউন্টগুলোতে আর কোনও লেনদেন হয়নি। ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাকড করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকাররা ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ চুরি করে ওই অ্যাকাউন্টগুলোতে স্থানান্তর করে। দিগুইতোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে – তিনি আগে থেকেই অ্যাকাউন্টগুলোতে অর্থ বণ্টনের ব্যবস্থা করেন।

শুনানির সময় গুইনগোনা এবার জিজ্ঞেস করেন, তিনি ওই চার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ‘ওপেনিং ফরমে’ স্বাক্ষর করেছিলেন কিনা। তিনি সেই উত্তরটুকুও ‘এক্সিকিউটিভ সেশন’-এ দেওয়ার অনুরোধ করেন। দিগুইতোর আইনজীবী কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি এর বিরোধিতা করে বলেন, আইনজীবী এখানে কিছু বলতে পারবেন না, তিনি শুধু তার মক্কেলকে পরামর্শ দিতে পারবেন, শুনানির সময় তিনি কিছু বলতে পারবেন না। দিগুইতো সব প্রশ্নের উত্তর ‘এক্সিকিউটিভ সেশন’-এ দেওয়ার অনুরোধ করেন।

সিনেটর তেওইফিস্তো গুইনগোনা জানিয়েছেন, তার কাছে ‘ব্যাংক সিক্রেসি ল’ অনুযায়ী দুটি ‘এক্সিকিউটিভ সেশন’-এর অনুরোধ এসেছে। তবে তিনি অনুরোধকারীদের নাম উল্লেখ করেননি।

শুনানির শুরুতেই পুরো প্রক্রিয়াকে ‘এক্সিকিউটিভ সেশন’-এর আওতায় আনার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি এর সঙ্গে একমত নই। প্রথমত ওই পাচার হওয়া অর্থের মালিক বাংলাদেশ সরকার, আর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে গোপনীয়তার কোনও অনুরোধ করা হয়নি। বস্তুত তারা পর্যবেক্ষক হিসেবে এখানে উপস্থিত রয়েছেন। তারা বাংকো ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে ওই অর্থ উদ্ধারে সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করেছেন। তাই অর্থের প্রকৃত মালিক যিনি, তার ক্ষেত্রেই ওই আইন প্রযোজ্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘আদালত ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন। আর ওই অ্যাকাউন্টগুলোর সকল দলিল এখন ‘পাবলিক রেকর্ডস’ আর এখন তা যে কেউ দেখতে পারবেন। আর এ ক্ষেত্রেও ব্যাংক গোপনীয়তা আইন প্রযোজ্য নয়।’

ওই তদন্ত কমিটির শুনানিতে আরও যুক্ত হন, আরসিবিসি প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জো তান, ফিলিপাইন ন্যাশনাল ব্যাংক (পিএনবি), ইস্ট ওয়েস্ট ব্যাংক এবং বানকো ডি ওরো (বিডিও)-এর কর্মকর্তা এবং  অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল ও দুই ক্যাসিনোর কর্তৃপক্ষ। 

উল্লেখ্য, হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখার ৪টি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন। সেখান থেকে ওই অর্থ ফিলিপিনো পেসোতে রূপান্তরের পর দুটি ক্যাসিনোতে পাঠানো হয়। সূত্র: ইনকোয়ারার।

/এসএ/এফইউ/