রহস্যবৃত্তের রহস্য উন্মোচনে আলোর দিশা





ফেয়ারি সার্কেলফেয়ারি সার্কেল। বাংলায় বলা যেতে পারে রহস্যবৃত্ত। দশকের পর দশক ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার নামিবিয়ান মরুভূমিতে দৃশ্যমান হওয়া সেই রহস্যবৃত্ত (ফেয়ারি সার্কেল) নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছিলেন বিজ্ঞানীরা। এই সার্কেল বা চক্রের প্রান্তে এক ধরনের ঘাস জন্মাতে দেখা গেলেও এর মধ্যিখানে কোনও ধরনের গাছ, ঘাস বা কোনওকিছুই জন্মায় না। এ নিয়ে রয়েছে নানা তত্ত্বও। তবে সবচেয়ে প্রচলিত তত্ত্ব অনুযায়ী, বৃত্তগুলোর উৎপত্তির কারণ উইপোকা। তবে অস্ট্রেলিয়ার পিলবারা অঞ্চলে শনাক্ত হওয়া বৃত্তগুলো সে প্রচলিত তত্ত্বকে প্রশ্নের মুখে ঠেলেছে।
নতুন খবর হলো, দক্ষিণ আফ্রিকার পর অস্ট্রেলিয়ায়ও ‘ফেয়ারি সার্কেল’ বা ‘রহস্য-বৃত্ত’ নামের অদ্ভূত বৃত্তাকার চিহ্ন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে প্রকৃতির এ রহস্যের সমাধানের ক্ষেত্রে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। হেমহোল্টজ-এর পরিবেশবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক স্টেফান গেটজিন বলেন, ‘নামিবিয়ান ফেয়ারি সার্কেলের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া ফেয়ারি সার্কেলের সংযোগ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কারণ অস্ট্রেলিয়ায় আমরা যে বৃত্ত শনাক্ত করেছি তার সঙ্গে উইপোকা কিংবা পিঁপড়ার সংশ্লিষ্টতা নেই।’
অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ বিজ্ঞানী ব্রোনোয়িন বেল প্রথম পিলবারা অঞ্চলে পরী-বৃত্তগুলো শনাক্ত করেন এবং ভাবনায় পড়েন যে কেন সেগুলো ওই অঞ্চলটির একটি বিশেষ জায়গাতেই হচ্ছে। এরপর স্থানীয় উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও বাস্তুসংস্থান বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হন তিনি। কিন্তু কেউই তাকে কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারলেন না। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেল বলেন, ‘আমি এ বৃত্তগুলোকে চিকেন পক্স নামে ডাকতে লাগলাম।’


অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে শনাক্ত হওয়া ফেয়ারি সার্কেল২০১৪ সালে ফেয়ারি সার্কেল নিয়ে ড. গেটজিনের প্রতিবেদন প্রকাশের আগ পর্যন্ত সে ধারণা নিয়েই ছিলেন বেল। গেটজিনের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের পর বেলের ধারণা হলো তার শনাক্তকৃত বৃত্তগুলোও একই ধরনের। এরপর গেটজিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। বেলের সঙ্গে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ইমেইল চালাচালির পর গেটজিন অস্ট্রেলিয়ার ওই অঞ্চলটিতে যান যেখানে তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাঘুরি করে। দুই সপ্তাহ সেখানে কাটানোর পর কয়েক মাস ধরে গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করে গত সপ্তাহে তা প্রকাশ করা হয়। তবে গেটজিন মনে করেন, রহস্যবৃত্তকে ঘিরে থাকা রহস্যের সমাধান এখনও হয়নি। নতুন আবিষ্কৃত রহস্যবৃত্ত নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। সেইসঙ্গে নামিবিয়ান ফেয়ারি সার্কেল নিয়েও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ফেয়ারি সার্কেল নিয়ে প্রচলিত নানা তত্ত্ব

ফেয়ারি সার্কেল বা রহস্যবৃত্ত নিয়ে প্রচলিত আছে নানা মত। উইপোকার তত্ত্ব অনুযায়ী বলা হয়ে থাকে যে, পোকাগুলো স্বল্পজীবী উদ্ভিদের মূল খেয়ে ফেলে এবং সে জায়গাটুকু ফাঁকা হয়ে যায়। আর তা গোল গোল চক্রের মতো হয়ে পড়ে। এরপর সেখানে বৃষ্টির পানি জমা হয় এবং সে পানি ভূগর্ভে চলে যায়। এতে করে উইপোকা আর ঘাসের চক্রগুলো শুকনো মৌসুমেও বহাল থাকে।
বিভিন্ন তত্ত্বে আবার উট পাখি, বিষাক্ত উদ্ভিদ এবং গ্যাসকেও ফেয়ারি সার্কেলের উৎপত্তির কারণ হিসেবে হাজির করা হয়। এ ফেয়ারি সার্কেলগুলোকে স্থানীয় হিমবারা ঈশ্বরের পদচিহ্ন বলে মনে করেন। এমনও জনশ্রুতি আছে যে, প্রাগৈতিহাসিক কোনও ড্রাগনের বিষাক্ত নিঃশ্বাসের ফলাফল জমিগুলোর এই অনুর্বরতা! আর অতি সম্প্রতি ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা দাবি করেন যে ভীনগ্রহীদের বহনকারী যান ইউএফও’র অবতরণের কারণে ফেয়ারি সার্কেলের উৎপত্তি। সূত্র: বিবিসি, নিউ ইয়র্ক টাইমস

/এফইউ/বিএ/