ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের নতুন চিফ অব স্টাফ লুলা, প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফের চিফ অব স্টাফ করা হয়েছে। এর ফলে ‘অপারেশন কার ওয়াশ’ দুর্নীতি মামলায় তাকে ফেডারেল আদালতের জেরার মুখে পড় হবে না। তবে এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শহরে তীব্র বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হচ্ছে।

দিলমা রৌসেফ এবং লুলা দা সিলভা

বুধবার লুলার সঙ্গে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের চার ঘন্টা আলোচনার পর লুলাকে নতুন চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। নিয়োগের পর দিলমা বলেছেন, ‘এই নিয়োগের ফলে আমার সরকার শক্তিশালী হয়েছে, কিন্তু এখানে এমন মানুষের অভাব নেই, যারা চান না সরকার শক্তিশালী হোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (লুলা) একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, যিনি অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে কার্যকর ভূমিকা নিতে সক্ষম হবেন।’

‘অপারেশন কার ওয়াশ’ দুর্নীতি মামলায় দুই বছর ধরে তদন্ত করা বিচারক সার্জিও মোরো বুধবার দিলমা রৌসেফ, লুলা দা সিলভা সহ ওই দুর্নীতির সাথে সম্পর্কিত ফোনে কথপোকথনের  প্রায় ৫০টি গোপন রেকর্ডিং বুধবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করেন, সেখানে দেখা যায় দুর্নীতি জন্য অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতেই লুলার ওই নিয়োগের বিষয়টি সামনে আসে।

সাও পাউলোতে বিক্ষোভ

লুলার নিয়োগের ঘোষণা আসার ঘন্টাখানের মধ্যেই হাজার হাজার মানুষ রাজধানী ব্রাজিলিয়ার রাস্তায় নেমে এই নিয়োগের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। একই সঙ্গে সাও পাউলো, বেলো হরিজন্তে সহ অন্যান্য বড় শহরগুলোতেও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। ব্রাসিলিয়ায় পুলিশ টিয়ার গ্যাস এবং স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। প্রায় পাঁচ হাজার বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করেন।

ব্রাজিলের প্রধান বিরোধী দলের নেতা রুবেনস বুয়েনো বলেন, ব্রাজিল এদের দ্বারা চলতে পারে না। তারা তাদের পদবির অপব্যবহার করে যে কোনও মূল্যে ক্ষমতাসীন থাকতে চান।’

ব্রাজিলের আইনানুসারে, মন্ত্রীসভা সদস্যদের শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্টে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়। গত দুই সপ্তাহ আগে দুর্নীতি মামলায় লুলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলা তেল কোম্পানির কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ গ্রহণ করেছেন। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে রিও ডি জেনেরিও, সাও পাওলো ও বাহিয়া প্রদেশের বহু রাজনীতিবিদ ও কর্মকর্তাদের আটক করা হয়েছে। এসব রাজনীতিবিদ অবৈধ অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানির ঠিকাদারি হাতিয়ে নিয়েছেন। তবে লুলার দাবি, ২০১৮ সালে যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন, এজন্যই তার ওপর ওই অভিযোগ আনা হয়।

ব্রাসিলিয়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা

লুলাকে নির্দোষ দাবি করে প্রেসিডেন্ট রৌসেফ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলা, যিনি আট বছর ধরে ক্ষমতায় ছিলেন, তিনি নিজের গ্রহণযোগ্যতাকে এভাবে নষ্ট করবেন না।’

ধারণা করা হচ্ছে, বিরোধীদের তোপের মুখে দুর্বল হয়ে পড়া সরকারকে শক্তিশালী করবে লুলার এই নিয়োগ। কংগ্রেসে অভিসংশনের মুখে পড়া প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফকে রক্ষা করতে ভূমিকা পালন করবেন লুলা। উল্লেখ্য, অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত দিলমা রৌসেফ সরকারের জনপ্রিয়তা অনেকাংশেই কমেছে বলে জানা গেছে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি।  

/এসএ/বিএ/