বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি

হোতাদের আড়াল করতে চাইছে ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল!

nonameযুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরির বিষয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে সন্দেহভাজন ব্যাংক ম্যানেজার মাইয়া সান্তোস দিগুইতোর আইনজীবী অভিযোগ করেছেন, ঘটনার তদন্তে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) সঙ্গে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) যোগসাজশ রয়েছে। কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তাকে বাঁচাতে বিষয়টিকে ধামা-চাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
দিগুইতোর আইনজীবী ফার্দিনান্দ তোপাসিও বলেন, ‘এখানে এক ষড়যন্ত্র চলছে। বিত্তশালী, শক্তিশালী এবং যাদের বড় বড় যোগাযোগ আছে, তারা এর সাথে জড়িত। তবে আমরা মনে করি সিনেট কমিটি সঠিক তদন্ত করতে সক্ষম হবে।’
তিনি জানান, তার মক্কেলের আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার রয়েছে। ‘সিনেটের তদন্ত কমিটি তাকে শুনানির জন্য ডাকার পর দিগুইতো সঠিক সময়ে উপস্থিত থাকতে সচেষ্ট ছিলেন। ওই সময়ের পূর্বেই দেশে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি সহকারে তিনি ব্যক্তিগত কাজে দেশের বাইরে যেতে চাইলে, এএমএলসি তড়িঘড়ি করে তার নামে বিচার বিভাগে মামলা দায়ের করে। আর আরসিবিসি তাকে সংবাদমাধ্যমে অভিযুক্ত হিসেবে তুলে ধরে।’ তিনি বলেন, ‘হয় এএমএলসি নিজের কাজ করতে জানে না, অথবা সংস্থাটি বিশেষ কোনও মহলকে বিচারের হাত থেকে বাঁচাতে চাইছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে তাকে (দিগুইতো) সাত থেকে চৌদ্দ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে, সেখানে তাকে নিজের পক্ষে সাফাই দেওয়ার সাংবিধানিক অধিকারও রয়েছে। এজন্য আমরা সিনেট তদন্ত কমিটির কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, তারা যেন ওই তদন্ত থেকে এএমএলসি প্রতিনিধিদের বাদ দেন। কারণ আমাদের মক্কেলকে তারাই ফাঁসাচ্ছে।’

তোপাসিও অভিযোগ করেন, আরসিবিসি হেড অফিস কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তাদের বাঁচাতে বিষয়টিকে ধামা-চাপা দিতে চাইছে। আরসিবিসি-র অভ্যন্তরীণ তদন্তের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘এখানে ন্যায় বিচার সম্ভব নয়। আরসিবিসি-তে কেবল মাত্র আমার মক্কেলকেই সাসপেন্ড করা হয়েছে।’

 

এর আগে তোপিসিও  বলেন, ‘উইলিয়াম গো প্রচারমাধ্যমের সামনে যা বললেন এবং আরসিবিসি ব্যবস্থাপকরা যেভাবে প্রচারমাধ্যমকে দিগুইতোর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে ব্যবহার করেছেন, তার ফলে এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হলো যে, তান ব্যাংক প্রেসিডেন্টের পদে থাকলে তিনি পদাধিকারবলে ব্যাংকের যে কোনও দলিল বা ইমেইল পরিবর্তন বা মুছে দিতে পারেন। যেখানে তান নিজেই সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন আর অভ্যন্তরীণ তদন্ত এখনও সম্পন্ন হয়নি, সেখানে তাকে আরসিবিসি-র প্রেসিডেন্ট পদে বহাল রাখাটা অবাক করার মতো বিষয়।’       

তোপাসিওর আশঙ্কা, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তের দায়িত্বে থাকা অ্যাটর্নি ম্যাসেল ফার্নান্দেজ যে আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত, সিইও তান সেই এসিসিআরএ-কে তার পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন। তবে তানের আইনজীবী লিম এ সব আশঙ্কাকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন।

এর আগে ৮১ মিলিয়ন ডলার সাইবার ডাকাতির তদন্তে ৬ সন্দেহভাজনের একজন, ব্যবসায়ী গো তার আইনজীবী র‍্যামন এসগোয়েরার মাধ্যমে জানিয়েছেন, গো কোম্পানির নামে করা অ্যাকাউন্টটি ভুয়া। দিগুইতো ভুয়া স্বাক্ষর এবং দলিলের মাধ্যমে গো কোম্পানির নামে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন এবং তাকে ১০ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন বলেও উইলিয়াম গো অভিযোগ করেছিলেন।

শুক্রবার তানের আইনজীবী ফ্রান্সিস লিম জানিয়েছিলেন, তান তদন্তের স্বার্থে অফিস থেকে ছুটিতে যেতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের পরিচালকরা তানের ভদ্র আচরণের প্রশংসা করেন, কিন্তু তার ওপর তাদের আস্থা অটুট রয়েছে।’

এদিকে, ইস্ট ওয়েস্ট ব্যাংকের (ইডব্লিউবি) বিরুদ্ধে ২০০ মিলিয়ন পেসো (ফিলিপাইনের মুদ্রা) ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ছয় সন্দেহভাজনের একজন ব্যবসায়ী উইলিয়াম সো গো। তিনি দিগুইতোকে এজন্য অভিযুক্ত করেছেন। উল্লেখ্য, দিগুইতো এর আগে ইস্ট ওয়েস্ট ব্যাংকের ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন। 

সিনেটের শুনানিতে মঙ্গলবার গো দাবি করেন, তাকে ইডব্লিউবি-এর বোনিফ্যাসিও গ্লোবাল ব্রাঞ্চের ম্যানেজার অ্যালান পেনালোসা দিগুইতোর সাথে দেখা করান এবং তিনি তাকে ২০০ মিলিয়ন পেসো ঘুষ দিতে চান। ওই অর্থ তাকে কেন দেওয়া হবে তা জিজ্ঞেস করা হলে গো-কে তারা জানান, এ সম্পর্কে তারা কিছু বলতে পারবেন না। 

উল্লেখ্য, হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের পুরো সিস্টেম নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখার ৪টি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন। সূত্র: ইনকোয়ারার।

/এসএ/বিএ/